গতকাল (বৃহস্পতিবার) আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠান শেষে ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেছেন, “সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম চলছে। আশা করি করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে ওই সময়ে দুটি পরীক্ষা নিতে পারব। তবে পরিস্থিতি যদি অনূকূলে না আসে, তাহলে গত বছর যেভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফলাফল দেওয়া হয়েছে সেভাবে দেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও পরীক্ষা নিয়েই ফল দিতে চাই। শিক্ষার্থীদের যেন প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি না হয়, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ওইভাবে জিজাইন করা হয়েছে। আশা করি শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে কোনো সমস্যা হবে না। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম চলছে। এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।’
এর আগে (বুধবার) শিক্ষামন্ত্রী তার সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, “স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত স্কুল-কলেজ খুলছে না।”
মন্ত্রী বলেন, “এখনই অটোপাসের চিন্তা নয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।”
এ প্রসঙ্গে ইডেন মহিলা বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী জানান, এবারও হয়তো পরীক্ষা ছাড়াই অটোপাস দেয়া হবে। কিন্তু এটা শিক্ষার্থীদের ওপর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। কারণে এটা আগেই জানিয়ে দিলে শিক্ষার্থীরা একদমই লেখাপড়া করবে না।
রাজধানীর একজন অভিভাবক তার হতাশার কথা ব্যক্ত করে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো টানা দেড়বছরের মত বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবে না। তিনটি আবশ্যিক বিষয়- বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক এগুলোতে পরীক্ষা নেবার কথা বলা হয়েছিল। সেটা হলেও ছাত্রছাত্রীরা একটু পড়ালেখায় মন দিতো।
উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে সর্বশেষ তা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বহাল করা হয়েছে। এরপরও স্কুল কলেজ মাদ্রাসা খোলা হবে কিনা তা ‘যদি’ ‘কিন্তু’তে অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে।
ফরম ফিল আপ শুরু
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) থেকে চলতি বছরের এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ শুরু হয়েছে। চলবে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত। আর ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ফরম পূরণের জন্য শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক এসএমএম পাওয়া শিক্ষার্থীরা ফি পরিশোধ করতে পারবেন।
করোনার কারণে এবার কোনো নির্বাচনী পরীক্ষা হবে না। ফরম পূরণের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অনলাইনে হবে। কোনো অবস্থায় শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের স্বশরীরে প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবেন না।
নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দৃষ্টিগোচর হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ফরম পূরণ প্যানেল বন্ধ করাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে
এদিকে ১১ আগস্ট থেকে লকডাউন শিথিল করার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে পরীক্ষার্থীদের। চলতি মাস থেকেই শুরু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া সাপেক্ষে স্থগিত থাকা ভর্তি পরীক্ষাগুলো আয়োজন করা হবে। সেক্ষেত্রে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে শুরু হবে ভর্তি পরীক্ষা। এদিকে, চলতি মাসেই আর্মড ফোর্সেস ও আর্মি মেডিক্যাল এবং বিইউপির ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১০ সেপ্টেম্বর নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ।
দেশের করোনা পরিস্থিতি উন্নতি এবং চলমান লকডাউন তুলে নেওয়া হলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। এর আগে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রাথমিক সিলেকশনের ফল প্রকাশ করা হবে।
তবে সবকিছু নির্ভর করছে করোনার ওপর। চলমান করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতি কিংবা বর্তমান অবস্থা বিরাজ করলে ভর্তি পরীক্ষা সেপ্টেম্বরের শেষেও আয়োজন করা যাবে না বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটির সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের মূল্যায়নে সারাদেশে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ‘অটো পাস’ করে। এছাড়া ২০১৯ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন পাস করে। এই সব শিক্ষার্থীর ৪/৫ লাখই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
জানা গেছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক সিলেকশনের ফল প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত টেকনিক্যাল সাব কমিটির আহবায়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, আমরা সেপ্টেম্বর মাসকে টার্গেট করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই জানিয়ে দেওয়া হবে।