মোঃ হালিম মিয়া,বিশেষ প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের নাগরপুরে সূর্যমুখী ফুল চাষে লাভের নতুন আশা দেখছেন সৌখিন চাষি দুলাল সরকার(৬৫)। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন ঘিওরকোল গ্রামের তুষ্টু লাল সরকারের বড় ছেলে দুলাল সরকার। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ের মধ্যে প্রতি গ্রামে এর চাষ না থাকলেও দুলাল তার নিজস্ব জমিতে প্রতিবছরই কিছু নতুন নতুন এবং বিলুপ্ত জাতের ফসল চাষ করে থাকেন।
সরেজমিন এমন দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে কৃষকরা এই ফুল চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। ১৫ শতাংশ জমিতে চতুরপার্শে প্রায় ২ ফুট প্রশস্ত বিরল জাত কুসুম ফুলের আবাদের মাঝে শত হস্রাধিক সূর্যমুখী ও কুসুম ফুল পূর্ণতা নিয়ে বাতাসে দোলা খাচ্ছে। সবুজ পাতার আড়ালে মুখ উচুঁ করে আছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর হাঁসিতে হাসছে মাঠ। চারিদিকে সবুজের মাঝে হলুদ লালের সমারোহ। আর এই হলুদ লাল প্রকৃতিকে করেছে আরোও লাবন্যময় ও বিমোহিত হরেক রকমের ফুলে।
সূর্য যেদিকে ফুলের মুখও সেদিকে। তাই এটাকে সূর্যমুখী বলে। নয়ন জুড়ানো এ দৃশ্য মোহিত করছে পথিকসহ সকলকে। প্রতিদিন আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াষুরা দল বেঁধে আসেন সূর্যমুখী ও কুসুম ফুলের বাগান দেখতে।
সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল তৈরি হয়, যা বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যায়। ফুলের গাছ শুকিয়ে গেলে তা জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখী ফুল চাষে কম খরচে অধিক লাভ পাওয়া যাচ্ছে, ফলে কৃষকরা এই চাষে আরও আগ্রহী হচ্ছেন।
সৌখিন চাষির দুলাল সরকার জানান, সূর্যমুখী ও কুসুম ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল হয়। ফুলের ক্ষেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধুও সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া শুকিয়ে যাওয়া গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখী ও কুসুম বীজ বপনের ৮০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যেই ফুল থেকে বীজ ঘড়ে তুলা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন সূর্যমুখীসহ তৈলবীজ জাতীয় শস্য চাষ করছেন। সূর্যমুখী প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তর অন্তর একটি করে বীজ বপন করতে হয়। একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৮০-১০০ দিনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। যা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয়। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত তেল কোলেস্টেরল মুক্ত ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এ তেলের চাহিদাও বেশি।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস.এম রাশেদুল হাসান জানান, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল কোলেস্টেরল মুক্ত এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, যার কারণে বাজারে তেলের চাহিদা বাড়ছে। কৃষি অফিস কৃষকদের আরও উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সারের পাশাপাশি কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে সূর্যমুখী চাষের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, সূর্যমুখী চাষে বিঘা প্রতি খরচ ১০-১২ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে বীজ হবে ১০-১৫ মণ। ১ মণ বীজে তেল হবে প্রায় ১৫ লিটার পর্যন্ত, প্রতি লিটার তেল বিক্রি হবে প্রায় ৩০০-৩৫০ টাকা দরে। এতে করে সূর্যমুখী চাষে খরচের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি লাভবান হবে কৃষকেরা। উপজেলার চরাঞ্চলসহ প্রায় ৭-৮ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখী চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।