বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : ভাষাসৈনিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মীর আনিসুল হক পেয়ারা আর নেই। রোববার (৩০ মে) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রংপুরে কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন মীর আনিসুল হক পেয়ারার ছোট মেয়ে ও রংপুর জিলা স্কুলের শিক্ষক শাহিনা সুলতানা। সোমবার পারিবারিক সিদ্ধান্তে মরহুমের নামাজে জানাজা ও দাফনকার্য সম্পন্ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
আনিসুল হক পেয়ারার মৃত্যুতে রংপুরের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাঙ্গণে শোকের ছায়া মেনে এসেছে। তার মৃত্যুতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার, সিটি মেয়র, জেলা প্রশাসক, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মহল থেকে শোক প্রকাশ করে মরহুমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আনিসুল হক পেয়ারা রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ছিলেন। তিনি ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর থেকে বাসায় শয্যাশয়ী হয়ে পড়েছিলেন।
দীর্ঘ তিন বছর ধরে শয্যাশয়ী থাকা অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
১৯৩৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেন আনিসুল হক পেয়ারা। তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। এ কারণে ৫২’র পরে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়েছিল। দীর্ঘ দিন তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল। পলাতক থাকায় ১৯৫৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরে ১৯৫৫ সালে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ১৯৫৬ সালে আবার তাকে পলাতক হতে হয়।
১৯৬১ সালে মাহিগঞ্জ আফানউল্ল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আনিসুল হক পেয়ারা। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলনের সময় দুই মাস কারাবন্দি ছিলেন। একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছিলেন।
আনিসুল হকের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চার মেয়ে ও একজন ছেলে। তার স্ত্রী নূরজাহান বেগম ২০১৪ সালে মারা গেছেন। ছেলে-মেয়ে সবারই বিয়ে হয়েছে। এদের মধ্যে বড় মেয়ে ইফফেতারা বিনতে আনিস লুবনা রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
দ্বিতীয় মেয়ে ইসমেত আরা বিনতে আনিস লুমা বেসরকারি ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন। ছেলে মীর ইফতেখারুল হক পল্লব ব্যবসা করছেন। আর বাকি দুই মেয়ের মধ্যে শামীম আরা সুলতানা রাজশাহীর চারঘাটে সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ছোট মেয়ে শাহিনা সুলতানা রংপুর জিলা স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।