বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে আরও একটি ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপন করছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে ঈদের যে আনন্দ, তা খুব একটা নেই। করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে জেঁকে বসা দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তা খুশির ঈদকে অনেকটাই নিরানন্দ করে দিয়েছে।
দু’শ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তা নিয়ে মসজিদে মসজিদে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। ঈদের দুই রাকাত নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে মহামারি করোনা থেকে মুক্তির ফরিয়াদ জানিয়েছেন তারা।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান ও প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়। নামাজ শেষে মোনাজাতে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি এবং অসুস্থদের সুস্থতার জন্য দোয়া করা হয়।
বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার প্রধান জামাতে অংশ নেয়া সালাম শেখ বলেন, বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই বরিশালের গ্রামের বাড়িতে। মহামারি করোনার কারণে সবাইকে ফেলে ঢাকায় একা ঈদ করছি। এই ঈদ কীভাবে আনন্দের হয়?
তিনি বলেন, ‘করোনা নিয়ে সবার মধ্যে নানা দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। কখন কার চাকরি চলে যায়, কেউ বলতে পারে না। আমরা এক কঠিন সময় পার করছি। বাধ্য হয়ে ঢাকায় পড়ে আছি। কাল থেকেই বাবা-মায়ের জন্য মনটা খুব খারাপ। এই প্রথম বাবা-মাকে ছেড়ে আমার প্রথম ঈদ।’
খায়রুল হোসেন নামের আরেকজন বলেন, গত বছর ঈদের নামাজ আদায় করেছি নানা দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা নিয়ে। এবারও তাই। এই মহামারি করোনাভাইরাস কবে আমাদের জীবন থেকে বিদায় নেবে, তা কেউ বলতে পারে না।
তিনি বলেন, ঈদের নামাজ আদায় করছি, কোরবানি দিচ্ছি, কিন্তু করোনার আতঙ্ক মন থেকে যাচ্ছে না। নামাজ শেষে মোনাজাতে করোনা থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়েছে। এ বালা-মুসিবত আল্লাহতালা নিয়ে এসেছেন, তিনিই এ বালা-মুসিবত নিয়ে যাবেন। আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারে না, কবে আমরা এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব।
রামপুরার সালামবাগ জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা ইয়ানুর রহমান বলেন, আমাদের মসজিদে ঈদের একটাই জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাতে হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন। কিন্তু নামাজ শেষে আগে যেমন একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করা হতো, এবার তেমনটা ছিল না। সবাই নামাজ পড়ে যে যার মত চলে গেছেন।
তিনি বলেন, কোলাকুলি তো দূরের কথা নামাজ শেষে একজন আরেকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন সে দৃশ্যও খুব কম দেখা গেছে। অনেকে কোনোরকমে দুই রাকাত নামাজ পড়েই জায়নামাজ গুটিয়ে চলে গেছেন। তারা নামাজ শেষে মোনাজাত করেনি এবং খুৎবা শোনেনি।
তিনি আরও বলেন, নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত মোনাজাতে ইমাম মহামারি করোনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হয়ে য়ারা আইসিইউতে আছেন, হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাদের সুস্থতার জন্য দোয়া করা হয়েছে।
এ মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা আরেক মুসল্লি মহিউদ্দিন খান বলেন, মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করছি এবং কোরবানি দিচ্ছি। কিন্তু ঈদের প্রকৃত যে আনন্দ তা দুই বছর ধরে আর নেই। গত বছর দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই মানুষের মধ্য থেকে ঈদের প্রকৃত আনন্দ হারিয়ে গেছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি- আল্লাহ যেন আমাদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেন এবং আল্লাহর নামে যে কোরবানি দিচ্ছি তা যেন কবুল হয়।
যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, কোনোরকমে ঈদের দুই রাকাত নামাজ মসজিদে আদায় করতে পেরেছি। মসজিদের সবাই মাস্ক পরে এসেছিলেন। তবে সামাজিক দূরত্ব খুব একটা বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। মসজিদে জায়গা না হওয়ায় কেউ কেউ রাস্তায় জামাতে অংশ নেন।
তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাস আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। শুরুতে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক ছিল, তা এখন নেই। কিন্তু করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে জেঁকে বসা দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। করোনার কারণে অনেকের আয়-রোজগার কমে গেছে। অনেকে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে। এ পরিস্থিতিতে ঈদের প্রকৃত আনন্দ থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। সবাই এখন করোনা থেকে মুক্তির অপেক্ষায়।