নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে ঘটনাটি ঘটে গত ২৬ জুন রাতে। পরে গত ৩০ জুন নির্যাতনের শিকার ওই নারী বাদী হয়ে স্বামীসহ তিনজনকে আসামি করে নেত্রকোণা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। আসামি খলিল গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ভাদুয়া গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে।
ঘটনাটি গত সপ্তাহের হলেও আজ বুধবার জানাজানি হয়। পরে সরেজমিনে ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে ঘটনার বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, আট বছর আগে খলিলুর রহমানের সঙ্গে ভুক্তভোগীর বিয়ে হয়। তাদের দুজন ছেলেমেয়ে রয়েছে। খলিল বেকার থাকায় বিয়ের সময় তাকে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয় ব্যবসার জন্য। কিন্তু তাও ব্যবসায় জোগাতে পারেননি তিনি। বিয়ের দুই-তিন বছর পর যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকেন তিনি। অপরাগতা প্রকাশ করায় অমানবিক নির্যাতন শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রাজধানী ঢাকায় চলে যান তিনি।
ঢাকায় গিয়ে স্বামীর নির্দেশে সন্তান নিয়ে ভিক্ষা করতে রাস্তায় নামেন খলিলের স্ত্রী। কিন্তু এতেও খলিলের মন ভরেনি। তাই স্ত্রীকে দেহ ব্যবসার প্রস্তাব দেন তিনি। স্ত্রী না মানায় তার ওপর নির্যাতন শুরু করেন খলিল। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন খলিলের স্ত্রী। ভাসুর বিল্লাল হোসেনের কাছে বিস্তারিত খুলে বলেন। কিন্তু কোনো সুরাহা না করেই ভুক্তভোগীকে স্বামীর কাছে ঢাকায় ফিরতে চাপ শুরু করেন তিনি ও তার পরিবার।
ওই ঘটনা জানার পর বাড়ি ফিরে আসেন খলিলও। গত ২৬ জুন রাতে স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকা দেন। এ সময় ভুক্তভোগী অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে খলিল তার মাথার চুল কেটে ফেলেন। পরে খবর পেয়ে মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন বাবা।
ভুক্তভোগীর বাবা অভিযোগ করে জানান, মেয়েকে নির্যাতনের পরও তার শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। বিয়ের সময় ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তার নেই।
ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বামীর নির্যাতনের কারণে তিনি এখন কানে শুনতে পান না। এ ছাড়া তার দুই সন্তান নিয়েও মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। এ ঘটনায় গত ৩০ জুন নেত্রকোণা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে স্বামীসহ তিনজনের নামে মামলা করেছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগীর আইনজীবী আবুল হাসেম। তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার মামলার ফাইলপত্র জমা দিয়েছি। বুধবার বিচারক বসেননি। যে কারণে মামলার বিষয়টি আগের অবস্থানে আছে।’
অভিযোগের বিষয়ে খলিলের বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শাহজাহান বলেন, ‘ঘটনা সত্য। যৌতুকের জন্য নিজের স্ত্রীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছেন খলিল। ওই নারীর শরীরে সিগারেটের আগুন নিয়ে ছ্যাঁকা ও তার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা সত্য।’
গাঁওকান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মোতালেব বলেন, ‘ঘটনা জানার পর ভুক্তভোগীর বাবাকে আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছি।’