♦ মেটার সঙ্গে এখনো সরকারের চুক্তিই হয়নি অনিশ্চিত ঢাকায় অফিস
♦ কলকাতায় মেটা স্থাপন করেছে ডাটা সেন্টার
♦ প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ রিপোর্ট করার পরও মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কনটেন্ট সরায় মেটা
নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে সাইবার অপরাধ। বেড়েই চলেছে সাইবার অপরাধের সংখ্যা। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সাইবার-দুর্বৃত্তদের হয়রানি রীতিমতো ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। তবে হতাশার খবর হলো, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের এর মূল প্রতিষ্ঠান মেটার সঙ্গে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তিই (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ট্রিটি-এমলেট) করতে পারেনি। এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি ভুয়া নিবন্ধিত মোবাইল সিম। এখনো ডাটাবেজের আওতার বাইরে রয়ে যাচ্ছে অনেক নতুন-পুরনো মোবাইল হ্যান্ডসেট। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে হারে সাইবার অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে সে অনুযায়ী যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে আমাদের কর্তৃপক্ষ। দিন দিন সাইবার অপরাধীদের বলয় আরও বিস্তৃত হলেও তা ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। অন্যদিকে ‘এমলেট’ করতে না পারার কারণে মেটার কাছ থেকে অনেক ধরনের নিশ্চিত সেবা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। র্যাব বলছে, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসসহ সাইবার অপরাধের রিপোর্ট করার পরও মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কনটেন্ট সরায় মেটা। তাও আবার সময়সাপেক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাইয়ে মেটার ঘোষণামতে, সারা বিশ্বে ফেসবুকের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ২৯৩ কোটি। এক বছর আগের তুলনায় এ সংখ্যা ১ শতাংশ বেড়েছে। দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৯৭ কোটি। মেটার বরাত দিয়ে বাংলাদেশের একটি সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশে ১১ কোটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রয়েছে, যা বিশ্বের প্রথম সারির কয়েকটি দেশের সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশি। বেশি অ্যাকাউন্ট হওয়ার কারণে অপরাধের সংখ্যা অন্য অনেক দেশের চেয়ে ঢের বেশি। তাই এ দেশে মেটার লোকাল অফিস স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত মেটাকে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হয়নি। এ বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা খুব একটা লক্ষণীয় নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র বলছেন, বর্তমানে সরকারের সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথরিটি)। যদিও ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি (ডিএসএ) এবং এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি এনটিএমসি কনটেন্ট ব্লকিং ও ফিল্টারিং (সিবিঅ্যান্ডএফ) প্রজেক্টের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাষ্ট্রবিরোধী, সমাজবিরোধী ও অনৈতিক সব কাজ মনিটরিং এবং সরিয়ে ফেলার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
খোদ বিটিআরসির এক সূত্র বলছেন, বর্তমানে ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় অপব্যবহার হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে বিটিআরসির প্রধান পদক্ষেপ হচ্ছে এসব যোগাযোগমাধ্যম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট আপত্তিকর বা ক্ষতিকর পোস্ট-কনটেন্ট সরাতে অনুরোধ করা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো কখনোই পুরোপুরি এ অনুরোধ রাখে না। ফলে বিটিআরসির অনুরোধ করা সব পোস্ট বা কনটেন্ট সরানো হয় না অনেক ক্ষেত্রে। বিটিআরসির তথ্যে বাংলাদেশে ৭ কোটির বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী রয়েছেন। এসব ব্যবহারকারীর অনেকেই আবার একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। বেশি ব্যবহার হওয়া সোশ্যাল মিডিয়াগুলো হলো ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ, বিগো, লাইকি, ইমো ও টুইটার।
জানা গেছে, কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে মেটার সহায়তা নিতে পারছে। যদিও তা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ মেটা বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তার নিজের ইচ্ছানুযায়ী ডাটা সরবরাহ করে। এ ক্ষেত্রে ‘এমলেট’ না থাকার কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও জোর দিয়ে মেটার কাছ থেকে কোনো সহায়তা চাইতে পারছে না। মেটাও এতে বাধ্য নয়। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ মেটাকে এ দেশে তাদের লোকাল অফিস করার অনুরোধ জানিয়ে এলেও গত বছর মেটা ভারতের কলকাতায় একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তারা অনেকটা এড়িয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন প্রযুক্তিবিদদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান করা মেটার পলিসি ম্যানেজার শাবনাজ রশীদ দিয়ার চাকরি ছেড়ে দেওয়া নিয়েও নানা বক্তব্য আসছে।
এদিকে মেটার সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্কের কথা বলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে তো ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগই ছিল না। এখন তো হরদম তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়। বাংলাদেশে তো তাদের একজন নারী কর্মকর্তাও কাজ করছেন। মেটা আমাদের কথা শুনছে। কলকাতায় ডাটা সেন্টার করলেই যে আমাদের এখানে ফেসবুক তাদের লোকাল অফিস করবে না তা তো বলেনি। ফেসবুক আমাদের দেশে ব্যবসা করছে। ব্যবসার জন্যই তারা এ দেশকে হারাতে চাইবে না।’ সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকারের অনেক সফলতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেখুন, গত পাঁচ বছরে ২৬ হাজারের বেশি পর্নো সাইট এবং হাজার হাজার জুয়ার সাইট ও অ্যাপস আমরা বন্ধ করেছি। প্রযুক্তি দিয়ে প্রযুক্তিগত অপরাধ মোকাবিলা করতে হয়। কারণ এ দেশে একজন মানুষও ডিজিটাল অপরাধ থেকে নিরাপদ নন। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ সাইবার-দুর্বৃত্তরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও বাদ দিচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে অশ্রাব্য শব্দ প্রয়োগ করছে।’
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘আইটির ২৮টি খাতকে আমরা আয়কর অব্যাহতি দিয়েছি। এগুলোর কার্যকারিতা আছে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত। এগুলো নিয়ে এখন ভাবার সুযোগ রয়েছে। দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ফেসবুক, গুগলে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা ভ্যাট দিলেও ট্যাক্স দিচ্ছে না। এটা নিয়ে সারা বিশ্বেই আন্দোলন হচ্ছে।’ ডিজিটাল ইকোনমি থেকে রাজস্ব বাড়ানোর সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বচ্ছভাবে এটাকে নিয়ে আসতে হবে। নতুন নতুন সার্ভিসেস কোড নেই। রাজস্বের জন্য নতুন কোড আসবে। রাজস্ব বোর্ডকে অটোমেশন বাড়াতে হবে। রাজস্ব বোর্ডে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
তবে একাধিক সাইবার বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘ইতোমধ্যে মেটা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বিজ্ঞাপন না নিতে বিবৃতি দিয়েছে। এখন থার্ডপার্টি দিয়ে আমরা বিজ্ঞাপনের অর্থ দিচ্ছি। মেটার সঙ্গে তো আমাদের দেশ এখনো এমলেট করতে পারেনি। তাহলে তারা তো তাদের মতোই চলবে। মেটার মতোই গুগল কিংবা অন্য সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে প্রয়োজনে কূটনৈতিক চ্যানেলকে আরও কাজে লাগানো উচিত হবে সরকারের।’
তাদের মতে, এখনো ভুয়া নিবন্ধিত সিম বিক্রি হচ্ছে। তাহলে কীভাবে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রোধ করা সম্ভব? নতুন ব্যবহৃত হ্যান্ডসেটগুলো ডাটাবেজের আওতায় আনা হচ্ছে বলা হলেও প্রকৃত বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। এসব ফেক সিমের কারণে বেড়েছে বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ঘিরে প্রতারণা এবং ইমো হ্যাকের মতো অপরাধ। এর কারণে সীমাহীন ভোগান্তিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। আবার বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এখনো সাইবার অপরাধ দমন, তদন্ত ও ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। রাজধানীকে দিয়ে সারা বাংলাদেশকে বিচার করা কখনো ঠিক হবে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের থানাগুলোয় এখনো সাইবার মামলা লিপিবদ্ধ করতে কিংবা তদন্তের জন্য প্রশিক্ষিত পুলিশ অফিসার পদায়ন করা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে দেশের জনগণকে এখনো কাক্সিক্ষত মাত্রায় সাইবার সচেতন করা সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে সচেতনতামূলক কোনো উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়।
প্রযুক্তিবিদ সুমন হোসেন সাবির বলেন, ‘এ দেশে সাইবার ক্রাইমের অন্যতম একটি বড় প্ল্যাটফরম হলো ফেসবুক ও ইউটিউব। তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে মিলছে না। কিছু জায়গায় কনফ্লিক্ট তৈরি হওয়ার তাদের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ কারণে অনেক জেনুইন অনুরোধ তারা আমলে নিতে চায় না। এর নেপথ্য কারণ হলো, আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে মেটার কাছে যাওয়া বড় অংশের অনুরোধ পলিটিক্যালি মোটিভেটেড। এতে করে মিসট্রাস্ট তৈরি হয়। আমাদের দেশে মেটার অফিস করার কথা থাকলেও তারা কলকাতায় ডাটা সেন্টার করছে। এটা কীসের ইঙ্গিত?’ তিনি বলেন, ‘তথ্য সুরক্ষার জন্য ভারত একটি আইনের দিকে অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। সেই আইনটির জন্য টুইটারের সঙ্গে তাদের ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। ভারত কিন্তু সেই আইন থেকে পিছিয়েছে। কিন্তু ভারতের আদলে আমাদের তৈরি করা খসড়াটি থেকে আমরা পিছিয়ে আসতে পারিনি। সেই খসড়াটি এখন ভেটিংয়ে আছে।’
এলিট ফোর্স র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল দীর্ঘদিন কাজ করেছেন সাইবার অপরাধ নিয়ে। দায়িত্বে থাকাবস্থায় কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, ‘সাইবার ক্রাইমের ভৌগোলিক কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। শনাক্ত করাটা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সরকারবিরোধী গুজব ছড়ানোর মতো বিষয়গুলো বিদেশ থেকে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রেও আমরা আইনি জটিলতার মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘ফেসবুক-ইউটিউবভিত্তিক সাইবার অভিযোগের ক্ষেত্রে কনটেন্ট ব্লক করতে আমরা তাদের রিপোর্ট করি। সে ক্ষেত্রে আমরা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ইতিবাচক সাড়া পাই। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা সময়সাপেক্ষ হয়। এ ক্ষেত্রে র্যাবের অনেক সফলতা রয়েছে।’ ডিএমপির সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়ার বক্তব্যও অনেকটা একই রকম। তিনি বলেন, ‘হেন কোনো বিষয় নেই, যে ইস্যুতে গুজব ছড়ানোর ঘটনা ঘটেনি। তবে দেশে অবস্থানরত এসব সাইবার অপরাধীর অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
সাইবার অপরাধের চিত্র : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে চারটি ভিন্ন আইনের অধীনে প্রতি মাসে গড়ে ১৬৯টি সাইবার-সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ১৯৪। আর গত বছর এটি আরও বেড়েছে। ২০২২ সালে সাইবার-সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৩১৩টি। এর মধ্যে ২৮০টি মামলা তদন্ত করে সিটিটিসি। এসব মামলার মধ্যে ফেসবুক-সংক্রান্ত মানহানির ৯১টি ও পর্নোগ্রাফির মামলা ৫৮টি। এর বাইরে হ্যাকিং-সংক্রান্ত ৫১টি, ই-ট্রানজেকশনের ৪২, অনলাইন প্রতারণায় ২০ ও তথ্যপ্রযুক্তির মামলা ১৮টি। তথ্যপ্রযুক্তি, অনলাইন প্রতারণা, ই-ট্রানজেকশন ও হ্যাকিংয়ের ঘটনায় দায়ের হওয়া ১৩১টি মামলার সবকটির উদ্দেশ্যই ছিল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, যা সাইবার-সংক্রান্ত মোট মামলার ৪৭ শতাংশ। ডিএমপিসূত্র বলছেন, সিডিএমএস, সিআইএমএস ও এসআইভিএস প্লাসের মতো আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে অপরাধ ও অপরাধীদের পর্যালোচনা করে এটি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া এ ইউনিটটি গত দুই বছরে ২২ হাজারের বেশি নারী অনলাইন বা সাইবার স্পেসে হয়রানির বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, যাদের মধ্যে বেশির ভাগ ভুক্তভোগীই সব ধরনের তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করেছে। পুলিশের সাইবার সাপোর্টের তথ্যমতে, হয়রানির শিকার বেশির ভাগ নারীকেই (৪৩ শতাংশ) ফেক আইডির মাধ্যমে ব্ল্যাকমেল বা হেনস্তা করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (উত্তর) হিসাবমতে, ২০২২ সালে সাইবার অপরাধ বিষয়ে মোট মামলা হয়েছে ১৭১টি। এর মধ্যে ২০.৪৬ শতাংশ পর্নোগ্রাফি ও অনলাইনে হয়রানির অভিযোগের এবং ২৯.২৩ শতাংশ মামলা করা হয়েছে অনলাইনে প্রতারণার অভিযোগে। অন্যদিকে অ্যাকশন এইডের দেশের ছয়টি জেলার ওপর গবেষণা থেকে দেখা যায়, মাত্র ১৪.৯১ শতাংশ নারী অনলাইন হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দেয়। অভিযোগকারীর মধ্যে বেশির ভাগই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে (৪৪.১২ শতাংশ) এবং সবচেয়ে কমসংখ্যক (৫.৮৮ শতাংশ) সাইবার ক্রাইমের ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সিটিটিসি ও ডিএমপির মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ সংস্থাটির গবেষণা অনুযায়ী বেশির ভাগ নারী সামাজিকতার এবং পরিচয় ফাঁসের ভয়ে অনলাইনে নাম প্রকাশ না করেই অভিযোগ দেন।