বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : ফেসবুকের নীল সাদা জগত আজ সেজেছে অন্যরূপে। নিউজফিড স্ক্রল করলেই মিলছে পদ্মা সেতুর ছবি কিংবা সেতুটিকে নিয়ে প্রকাশ করা অনুভূতি। এ যেন মহা আনন্দের দিন। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে মায়ের মুখে এক চিলতে হাসি দেখার মতো তৃপ্তি।
২৫ জুন শনিবার উদ্বোধন করা হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। তাকে ঘিরেই এত আয়োজন।
নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এ সেতুর গর্বের জৌলুস কেবল পদ্মার দুই পাড়ে সীমাবদ্ধ নেই। তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রতিটি কোণায়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভার্চুয়াল জগতে পদ্মা সেতুকে নিয়ে লেখা পোস্ট আর ছবির পরিমাণ বলে দিচ্ছে আনন্দ আয়োজন পৌঁছে গেছে সেখানে।
রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে লেখক, কবি, সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ-সবার মধ্যেই সমান উচ্ছ্বাস। তাদেরই কয়জনের অনুভূতি ফেসবুকের পাতা থেকে তুলে ধরা হলো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের এই সেতু নির্মিত হওয়ায় গর্ববোধ করছেন এই নেতা। ফেসবুকে হ্যাসট্যাগের মাধ্যমে লিখেছেন, আমার টাকায় আমার সেতু বাংলাদেশের পদ্মা সেতু। এই সেতু নির্মাণে জনগণের ভূমিকা আছে বলে মনে করেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে পলক লেখেন, ‘বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিলে জনগণের কাছ থেকে বিপুল সমর্থন পাই। জনতার শক্তি হৃদয়ে ধারণ করে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে আজ আমরা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি।
দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দুর্নীতিমুক্ত বীরের জাতি হিসেবে বাঙালি নিজেদের বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত- “সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না”- এই চিরপ্রেরণার বাণীতে উজ্জীবিত হয়ে আমরা প্রমাণ করেছি আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা।’
এ প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন। পদ্মার ওপারের জেলা মাদারীপুরে তার শেকড়। প্রমত্তা পদ্মার বুকে একটি সেতুর প্রয়োজনীয়তা যিনি অনুভব করেছিলেন বহু বছর থেকে। এত আফসোস, হতাশা আর অপেক্ষার পর তৈরি এই সেতু নিয়ে তাই এই লেখকের উচ্ছ্বাস একটু বেশি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাদাত লেখেন, ‘আজ চোখের সামনে আস্ত এক পদ্মা সেতুর অবয়ব দেখেও কেন যেন বিশ্বাস হতে চায় না। স্বপ্ন মনে হয়। মনে হয়, এ সত্যিতো? হ্যাঁ, সত্যিই। পদ্মা সেতু এখন সত্যি। কিন্তু সত্যি হলেও এতো স্বপ্নেরই সেতু।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দুঃস্বপ্নের দীর্ঘ দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির সেতু। এই সেতু আমাদের। বাংলাদেশের। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ধন্যবাদ বাংলাদেশের মানুষ…’
পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে গত ৪ বছর ধরে যুক্ত ছিলে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমবিইসি) প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম। কাজের স্মৃতিচারণ করে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘চারপাশ জনমানবহীন।
আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার শুধু পানি আর পানি সেই সঙ্গে উত্তাল পদ্মার গর্জন। গভীর রাতে যখন পদ্মার মাঝে ঝড় শুরু হয় পানি তখন কয়েকফুট উচুতে উঠে যায়। উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন আর শব্দের হুংকার তো আছেই।
কলিজা শুকিয়ে যায়। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রকৌশলীর শ্রমিকরা একটি টাওয়ারের মধ্যে অবস্থান করে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে অনেক দেশি বিদেশি প্রকৌশলীরা চলেও গেছেন। রাতে কাজ শেষ করে আসার সময় স্পিড বোটগুলো আর বুঝতে পারে কোন দিকে যাবে। উপায় না পেয়ে সকাল না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা। আরও কত শত চ্যালেঞ্জ ছিল।’
পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘অপরাজিতা’ বলে সম্বোধন করেছেন সাংবাদিক মুন্নি সাহা। আরেক সাংবাদিক বাদল খান পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণ করে লিখেছেন, “আগে যখন পদ্মা নদী পার হতাম। তখন মাঝে মাঝে একটা স্বপ্ন দেখতাম।
আমি যদি কখনো আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ পেতাম। এবং চেরাগের দৈত্য যদি আমার কাছে জানতে চাইতো আমি কি চাই? তাহলে আমার প্রথম চাওয়াই থাকতো ‘আমাদের পদ্মা সেতু বানিয়ে দাও’।”
স্বপ্নের সেতুটিকে নিয়ে প্রত্যাশাও রয়েছে অনেকের। সাংবাদিক বোরহান উদ্দীন ফেসবুকে লেখেন, ‘পেছনে মিটিমিটি জ্বলছে পদ্মা সেতুর ল্যাম্পপোস্ট। বহুদূর থেকে দেখলেও মনে হচ্ছিল পদ্মার আলোয় আলোকিত আজ সারাবাংলা।
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। সেতুকে ঘিরে চাঁদাবাজ গ্রুপ মাথাচাড়া দিলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করার প্রত্যাশা থাকল।’
ছড়াকার ও কবি তামিম ইসমাইল। তিনি লেখেন, ‘আজ পদ্মা সেতুর হলুদ ছোঁয়া কাল তাঁহার বিয়ে/ আমি, আমরা কবুল করবো গাড়ির নিচে দিয়ে।’ পদ্মা পাড়ে তোলা নিজের ছবি শেয়ার করে অ্যামেচার রেডিও অপারেটর জাহিদুল হক খান লেখেন, ‘প্রমত্ত পদ্মা! আনন্দ বেদনার অপর নাম পদ্মা!’
পদ্মায় ফেরি পার হওয়া নিয়ে দুর্বিষহ স্মৃতি রয়েছে অগণিত মানুষের স্মৃতির ঝুলিতে। জাতীয় মানবধিকার কাউন্সিলের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আলম লেখেন, ‘১৪ মে ২০২১ তারিখ ঈদের দিন সকালে বাবা মারা যান।
শুধু ফেরির কারনে খুব কষ্ট হয়েছে যেতে। গিয়ে দেখলাম ফেরির সিঁড়ি উঠিয়ে ফেলেছে। খুব অনুরোধ করে ৬/৭ জনে মিলে আমার মোটরসাইকেল জাগিয়ে তুলে সহযোগিতা করেছে।
নিজের হাতে বাবাকে কবরে শুইয়ে দিয়েছি। ৬ আগস্ট ২০২১ সালাম ফুফা মারা যান। খুব কষ্ট করেও তাকে শেষবার ধরে দেখতে পারি নাই। আমার দাদা-দাদিকে দেখতে পারি নাই। সারা রাত ফুফু ফুফাসহ কুয়াশায় ফেরির জন্য অপেক্ষা। আজকের এই দিনের জন্য দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকা।’
শরিয়তপুর সদর উপজেলার ইউএনও হিসাবে কর্মরত আছেন মনদীপ ঘরাই। পদ্মা সেতুকে নিয়ে লেখা বই নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘পদ্মা সেতুর ষ্পর্শ পাওয়া শ্যামল ভূমি শরীয়তপুরের কিশোর শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের ভাবনা জানতে চেয়েছিলাম আমরা। যাদের কৈশোরের সাথে বেড়ে উঠেছে পদ্মা সেতু, তাদের কলমে এই বই।’
বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয় পরিচালক ও লেখক তামান্না সেতু লিখেছেন, ‘এই ব্রিজটা আমাকে আমার মায়ের সাথে যুক্ত করেছে। আমার জন্ম ভিটার সাথে যুক্ত করেছে।’ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন লেখেন, ‘ক্ষণ গণনা এখন ঘণ্টায়।
স্বপ্নজয়ের দ্বার উন্মোচন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে চলছে মহোৎসবের প্রস্তুতি। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃঢ়তায় স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু।’
এছাড়াও অসংখ্য মানুষ স্বপ্নের এই সেতু নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন ফেসবুকে। কারণ, পদ্মা সেতু কেবল একটি সাধারণ সেতু নয় বরং পুরো বাঙালি জাতির অহংকারের মূর্ত প্রতীক।সূত্র : ঢাকা মেইল