বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : পাপীষ্ঠ জালিমরা মনে করে তারা অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে। তাদের পাপের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার সাক্ষী থাকবে না। তাদেরকে পাকড়াও করা হবে না। অথচ আল্লাহ তায়ালা পাপীদের বিরুদ্ধে চার প্রকার সাক্ষী প্রস্তুত রেখেছেন। যা পবিত্র কুরআনুল কারিমে প্রমাণিত।
প্রথম সাক্ষী জমিন তথা ভূপৃষ্ঠ : পাপীদের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী হলো জমিন। এ প্রসঙ্গে সূরা জিলজালের ৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সে দিন জমিন সকল (খবর) সংবাদ বলে দেবে।’ আবু হুরায়রা রা: বলেন- ‘এর অর্থ, জমিন তার মধ্যে কৃত ভালোমন্দ যাবতীয় কর্মকাণ্ডের হিসাব দাখিল করবে। জমিনের ওপর যা কিছু ঘটে গেছে তার সব কিছু সে কিয়ামতের দিন বলে দেবে’ (তাফসিরে কুরতুবি)।
আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সা: এই আয়াত পাঠ করলেন ও বললেন, ‘তোমরা জানো, পৃথিবীর বৃত্তান্ত কি?’ সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। নবী সা: বললেন, ‘তার বৃত্তান্ত এই যে, নর অথবা নারী এ মাটির ওপর যা কিছু করছে এই মাটি তার সাক্ষী দেবে।
আর বলবে, অমুক অমুক ব্যক্তি অমুক অমুক দিনে অমুক অমুক কর্ম করেছে’ (তিরমিজি কিয়ামতের বিবরণ ও সূরা জিলজালের তাফসির পরিচ্ছেদ, মুসনাদে আহমদ-২/৩৭৪ নং)
দ্বিতীয় সাক্ষী মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ : দ্বিতীয় সাক্ষী হলো মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। এ প্রসঙ্গে সূরা ইয়াসিনের ৬৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেবো এবং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে ও তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করেছে।’ হজরত আনাস রা: বলেন, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে ছিলাম।
এমন সময় তিনি এমনভাবে হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁত দেখা গেল। তারপর তিনি বললেন, ‘তোমরা কি জানো আমি কেন হাসছি?’ আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দা তার প্রভুর সাথে যে ঝগড়া করবে তা নিয়ে হাসছি। সে বলবে, হে রব, আমাকে কি আপনি জুলুম থেকে নিরাপত্তা দেননি?
তিনি বলবেন, হ্যাঁ, তখন সে বলবে, আমি আমার বিরুদ্ধে নিজের ছাড়া অন্য কারো সাক্ষ্য গ্রহণ করব না। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি নিজেই তোমার হিসাবের জন্য যথেষ্ট। আর সম্মানিত লেখকদেরকে সাক্ষ্য বানাব।
তারপর তার মুখের ওপর মোহর মেরে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কথা বলার নির্দেশ দেয়া হবে। ফলে সেগুলো তাদের কাজের বিবরণ দেবে। তারপর তাদেরকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে তখন তারা বলবে, তোমাদের ধ্বংস হোক, তোমাদের জন্যই তো আমি প্রতিরোধ করছিলাম’ (মুসলিম-২৯৬৯)।
তৃতীয় সাক্ষী কেরামান কাতেবিন তথা সম্মানিত লেখকবৃন্দ : যে ফেরেশতারা সর্বদা বান্দার আমল লিপিবদ্ধ করে, তারাও পাপীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সূরা ইনফিতারের ১০ ও ১১ নং আয়াতে বলেন, ‘সম্মানিত লেখকবৃন্দ তোমরা যা করো, তারা সে সম্পর্কে অবগত।’
অর্থাৎ ফেরেশতারা প্রত্যেক ব্যক্তির প্রত্যেকটি কাজ সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত। সব জায়গায় সব অবস্থায় সব ব্যক্তির সাথে তারা এমনভাবে লেগে আছে যে, তারা জানতেই পারছে না, কেউ তাদের কাজ পরিদর্শন করছে। কোন ব্যক্তি কোন নিয়তে কী কাজ করেছে তাও তারা জানতে পারে।
তাই তাদের তৈরি করা রেকর্ড একটি পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড। এই রেকর্ডের বাইরে কোনো কথা নেই। এ সম্পর্কেই সূরা কাহাফের ৪৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘কিয়ামতের দিন অপরাধীরা অবাক হয়ে দেখবে তাদের সামনে যে আমলনামা পেশ করা হচ্ছে তার মধ্যে তাদের ছোট-বড় কোনো একটি কাজও অলিখিত থেকে যায়নি।
যা কিছু তারা করেছিল সব হুবহু ঠিক তেমনিভাবেই তাদের সামনে আনা হয়েছে’ (তাফসিরে কুরতুবি)।
চতুর্থ সাক্ষী সহিফা তথা আমলনামা : পাপীদের বিরুদ্ধে চতুর্থ প্রকার সাক্ষী হলো আমলনামা। আর এ প্রসঙ্গে সূরা তাকবিরের ১০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যখন আমলনামা উন্মোচিত করা হবে’। মৃত্যুর সময় মানুষের আমলনামা গুটিয়ে দেয়া হয়।
পুনরায় কিয়ামতের দিন হিসাবের জন্য তা খোলা হবে। যা প্রতিটি ব্যক্তি তা প্রত্যক্ষ করবে। বরং প্রত্যেকের হাতে তা ধরিয়ে দেয়া হবে (তাফসিরে আহসানুল বায়ান)।
হজরত কাতাদা রহ: বলেন, ‘হে আদম সন্তান তুমি যা লিখাচ্ছ তা-ই কিয়ামতের দিন একত্রিতাবস্থায় তোমাকে দেয়া হবে। সুতরাং মানুষ কী লিখাচ্ছে তা চিন্তা করে দেখা উচিত (তাফসিরে তাবারি-২৪/২৪৯)।
সুতরাং যুগের পাপীষ্ঠ জুলুমবাজরা আল্লাহর আদালতে বিচারের সম্মুখীন হওয়ার আগে সতর্ক হও। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।