তৈরি পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হচ্ছে চলতি নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। বর্ধিত এ বেতন ডিসেম্বরের এক তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
আজ বুধবার (১ নভেম্বর) মালিক-শ্রমিক ও নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সভা শেষে এ কথা জানান বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা।
বেলা ১১টায় শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা বৈঠকে ন্যূনতম কত মজুরি হবে, তা নিয়ে একমত হতে পারেনি বোর্ড। প্রস্তাবিত ১০ হাজার ৪০০ টাকা থেকে আরও বাড়ানো হবে বলে নিশ্চিত করেন মালিক প্রতিনিধি। তবে শ্রমিক প্রতিনিধি এটা আরও বেশি দাবি করেছেন। ঠিক কত টাকা বাড়ানো হবে, তা আজকের সভায় চূড়ান্ত করা যায়নি।
যদিও শ্রমিক প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৯ টাকার প্রস্তাব আগেই দিয়ে রেখেছিল। এর মধ্যে শ্রমিকরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন করছে।
সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে বিজিএমই সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, আমরা নতুন প্রস্তাব দেব। সেজন্য মালিকদের সঙ্গে বসে নতুন প্রস্তাব মজুরি বোর্ডে পাঠানো হবে। আশা করি এই প্রস্তাবে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট হবেন।
মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, আজকে পঞ্চম বোর্ডের সভা হয়েছে। সেখানে সর্বসম্মতভাবে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। মালিকপক্ষ নতুন একটি প্রস্তাব দেবে। সেই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করে নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ চূড়ান্ত একটি বেতন ঘোষণা করা হবে। কত টাকা হবে, তখন জানা যাবে।
তিনি আরও জানান, ডিসেম্বর মাসে নতুন মজুরি কার্যকর হবে এবং জানুয়ারি মাসে বর্ধিত হারে বেতন পাবেন শ্রমিকরা। তবে কত টাকা বাড়বে পরিষ্কার করেননি মালিক, মজুরি বোর্ড ও শ্রমিক প্রতিনিধি।
শ্রমিকরা কেন আন্দোলনে- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এর পেছনে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন আছে। সবাইকে এসব ইন্ধনে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, আমরা মালিকপক্ষের প্রস্তাবের অপেক্ষায় আছি। আশা করি তারা বর্তমান বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি বেতন প্রস্তাব দেবেন।
একই শ্রমিকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, এমন কোনো বেতন দাবি করা যাবে না যেটা মালিকদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। কারণ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এই শিল্পের অবস্থাও আমাদের দেখতে হবে। তবে একজন শ্রমিক যেন সংসার নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারে সেই বেতন যেন বাড়ে সেই দাবি করেছি।
অন্যান্য সংগঠনের ২৩ হাজার বা ২৫ হাজার দাবি প্রসঙ্গে রনি বলেন, দাবি করতেই পারে। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে যেন হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যৌক্তিক শ্রমিক আন্দোলনকে সমর্থন করি। কিন্তু কোনো ভাঙচুর-বিশৃঙ্খলাকে সমর্থন করি না। সাম্প্রতিক আন্দোলনে অন্য কোনো পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে। আমার শ্রমিক ভাই-বোনেরা কোনো কারখানা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত না।
মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, আমরা মালিক ও শ্রমিক পক্ষের বক্তব্য শুনেছি এবং আশা করছি ভালো বেতন বাড়বে। কত টাকা বেতন বাড়বে তা জানতে পারব নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। তাই এই কয়টা দিন ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।
চেয়ারম্যান বলেন, আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিচ্ছে। আপনারা নিজের সম্পদ নষ্ট করবেন না। কারণ এ শিল্প নষ্ট হলে আপনারাই অসুবিধায় পড়বেন।
সাধারণ শ্রমিকদের পক্ষে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বিবেচনায় নিয়ে মজুরি ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেইসব প্রস্তাবও লিখিত আকারে মজুরি বোর্ডের কাছে জমা হয়। আর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) শ্রমিকদের জীবন-মান মূল্যায়ন করে ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৫ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।