বঙ্গনিউজবিডি রিপোর্ট : পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেছেন, আমার ভাষা, আমার কৃষ্টি ও সংস্কৃতি আমার জন্য গৌরবের। আমরা আমাদের গৌরবান্বিত ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে চাই। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল সংস্কৃতির সম্প্রদায়কে এক ছাতার নিচে ধরে রেখেছেন।
আজ খাগড়াছড়ি সদর পানখাইয়া পাড়া মারমা উন্নয়ন সংসদের মাঠে কেন্দ্রীয় মারমা উন্নয়ন সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি এসব কথা বলেছেন।
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরও বলেন, বাংলাদেশে আলাদা আলাদা জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভংগি আলাদা আলাদা হতে পারে। কিন্তু দেশ আপনার, আমার, আমাদের সকলের। এই কষ্টার্জিত বাংলাদেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পাদনের ক্ষেত্রে তিনি যে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন আপনার তা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করেছেন। প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিটি জাতি গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ এসব সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা-দীক্ষা ও কৃষ্টি সংস্কৃতির উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন একটি সোনার বাংলা বিনির্মাণের এবং এক ছাতার নিচে সকল জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় নিরাপদ ও শান্তিতে সহাবস্থান করবে। প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে সকলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করাসহ দেশের উন্নয়নে এদেশের জনপ্রতিনিধি, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি বেসরকারি সকল সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, আমরা সকল সংস্কৃতির মাঝে ঐক্যের বন্ধন নিশ্চিত করতে চাই।
প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমি বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোতে বিজু নামকরণে উৎসব প্রচার হচ্ছে দেখেছি। বৈসাবি উৎসবের ত্রিপুরাদের বৈসু ও মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবের কথা মিডিয়াতে তেমন প্রচার হতে দেখি না। এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করে প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, আমার মনে হয় না মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই আর ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসবের নাম বাঙালি বন্ধুরা মনে করতে পারছেন। তিনি বলেন, গতকাল টিভিতে দেখলাম হেডলাইনে লিখা ‘দ্বিতীয় দিনেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজু উৎসব চলছে’- কথাটা এখানে বৈসাবি উৎসব লিখা থাকলে আপত্তি ছিল না। এখানে একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের উৎসবের নাম উল্লেখ করাটা যুক্তিযুক্ত হয়নি বলে আমি মনে করছি বলে মন্তব্য করেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন এর পরিবর্তন হওয়া উচিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আলাদা আলাদা বৈচিত্রের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি রয়েছে- এগুলোকে সংরক্ষণ ও যথাযথভাবে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।
এর আগে মারমা তরুণ-তরুণি ও শিশু-কিশোর আনন্দঘন পরিবেশে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বর্ণিল শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়া হয়ে খাগড়াছড়ি সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পানখাইয়া পাড়াতে গিয়ে শেষ হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গান ও বাদ্যের তালে তালে দেশ বিদেশ থেকে আগত প্রবাসী পার্বত্য নাগরিক ও বিভিন্ন ধর্মানুসারি হাজারো তরুণ তরুণী নেচে গেয়ে সাংগ্রাই এ উৎসবকে মহিমান্বিত করে তোলে।
খাগড়াছড়ির মারমা উন্নয়ন সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মংপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলার ডিজিএফআই কমান্ডার কর্ণেল আব্দুল্লাহ মো.আরিফ, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা প্রসাশক মোঃ সহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার), খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শানে আলম, উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স,’র নির্বাহী কর্মকর্তা কুষ্ণ কুমার চাকমা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।