বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষার সদ্য প্রকাশিত ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। সফটওয়্যারে টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে তথ্যগত কিছু ভুল ধরা পড়ায় ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বৃত্তির ফলাফল প্রকাশের পরপরই ডিপিই থেকে তা স্থগিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিপিই পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. উত্তর কুমার দাশ বলেন, বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হলেও যান্ত্রিক ক্রটির জন্য তা স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে সেটি সংশোধনের কাজ শুরু চলছে। আগামীকাল বুধবার সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, সারাদেশের সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল বিদ্যালয়ে না পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশোধনের কাজ শেষ হলে নতুন করে ফলাফল পাঠানো হবে। সংশোধিত ফলাফল বিদ্যালয়ে পাঠাতে বলা হবে। মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ত্রুটি সংশোধনের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
ফলাফলে কী ধরনের টেকনিক্যাল ত্রুটি ছিল, জানতে চাইলে ডিপিইর এই কর্মকর্তা বলেন, সফটওয়্যারে কিছু কোডিংয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সে কারণে ফলাফলের তালিকায় কিছু ত্রুটি দেখা দিয়েছে। প্রকাশিত ফলাফল অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে। আগামীকাল বুধবার সকালের মধ্যে সংশোধিত বৃত্তির ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
তবে প্রকাশিত ফলাফলে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি বা বড় ধরনের কোনো ভুল ছিল না বলেও জানান তিনি।
এদিন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ২০২২ সালের বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। এতে দেখা যায়, এ বছর প্রাথমিকে ৮২ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী জানান, এবার ট্যালেন্টপুলে (মেধাবৃত্তি) ৩৩ হাজার ও ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী সাধারণ বৃত্তি পেয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতেই বৃত্তি দেওয়া হতো। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা না হওয়ায় প্রাথমিক বৃত্তিও পরীক্ষাও হয়নি।
এরপর গত বছরের ২৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ২০২২ সাল থেকে আলাদা করে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে একযোগে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুসারে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা হয়। বাংলা, প্রাথমিক গণিত, ইংরেজি ও প্রাথমিক বিজ্ঞান এ চারটি বিষয়ে হয় পরীক্ষা। এবারের বৃত্তি পরীক্ষায় পাঁচ লাখ ৩৯২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করে, পরীক্ষায় অংশ নেয় চার লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী। মোট নম্বর ছিল ১০০ এবং সময় ছিল দুই ঘণ্টা।
এছাড়া ঝরে পড়া শিশুদের শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫৮ জনকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমিত পরিসরে প্রতিযোগিতা তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর লক্ষ্যে দুই ঘণ্টার এ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষার সময় ও বিষয় কম থাকায় শিশুদের ওপর বাড়তি কোনো চাপ তৈরি হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। এ বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে শিশুর শিক্ষা ব্যয়ের একটি অংশের দায়িত্ব নেওয়ায় রাষ্ট্রের প্রতি পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ আরও প্রবলভাবে অনুভূত হবে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভিত আরও শক্তিশালী ও নাগরিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধন শক্তিশালী হবে বলেও আমি মনে করি।
তিনি বলেন, উপজেলা/থানার প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যার অনুপাতে উপজেলা/থানা কোটা নির্ধারণ করে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি বণ্টন করা হয়। সাধারণ বৃত্তি ইউনিয়ন ও পৌরসভা ওয়ার্ডভিত্তিক বিতরণ করা হয়। এ বছর সাধারণ গ্রেডে বৃত্তির ক্ষেত্রে আট হাজার ১৪৫টি ইউনিয়ন/পৌরসভা ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৬টি (তিনজন ছাত্র ও তিনজন ছাত্রী) হিসেবে ৪৮ হাজার ৮৭০টি এবং অবশিষ্ট ৬৩০টি বৃত্তি থেকে প্রতিটি উপজেলা/থানায় একটি করে ৫১৩টি সাধারণ বৃত্তি দেওয়া হয়েছে।
জাকির হোসেন আরও বলেন, বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থের পরিমাণও ২০১৫ সাল থেকে বাড়ানো হয়েছে। আগে ট্যালেন্টপুল বৃত্তিপ্রাপ্তদের মাসে ২০০ টাকা করে দেওয়া হলেও ২০১৫ সাল থেকে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্তদের মাসে ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২২৫ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া উভয় ধরনের বৃত্তিপ্রাপ্তদের প্রতি বছর ২২৫ টাকা করে এককালীন দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, নীতিমালা সংশোধনের কারণে উপবৃত্তির টাকা দিতে দেরি হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। অল্প সময়ের মধ্যে বকেয়াসহ টাকা পেয়ে যাবে। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে তারা মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়ে যাবে।