বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : আজ পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম। ইয়াজদাহম ফার্সি শব্দ, যার অর্থ এগারো। ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম বলতে এগারোর ফাতিহা শরিফকে বুঝায়। এ ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম শরিফ বড়পীর আবদুল কাদের জিলানির স্মরণে পালিত হয়। এই দিনে যুগের শ্রেষ্ঠ অলি বড়পীর আবদুল কাদের জিলানির (রহ.) ইন্তেকাল করেন। এ জন্য উপমহাদেশের মুসলিমদের কাছে এ দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি ৪৭০, মতান্তরে ৪৭১ হিজরি সালের পয়লা রমজান ইরাকের বাগদাদের জিলান নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম সাইয়্যিদ মহিউদ্দীন আবু মুহাম্মদ আবদুল কাদের আল-জিলানি আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী। বাবার দিক থেকে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) হজরত আলীর (রা.) ১১তম বংশধর। মায়ের দিক থেকে তিনি হজরত আলীর (রা.) অষ্টাদশ বংশধর। তিনি ছিলেন কাদেরিয়া তরিকার প্রবর্তক, শরিয়ত ও তরিকত জগতের মহা সম্রাট, যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহ এবং দার্শনিক। তার শিক্ষার পেছনে রয়েছে মায়ের অবদান। তাঁর মায়ের পরামর্শে ৪৮৮ সনে ১৮ বছর বয়সে বাগদাদে রওনা হন। বাগদাদে গিয়ে তিনি শায়েখ আবু সাইদ ইবনে মোবারক মাখযুমী হাম্বলী, আবুল ওয়াফা আলী ইবনে আকীল এবং আবু মোহাম্মদ ইবনে হোসাইন ইবনে মোহাম্মদ (রহ.)-এর কাছে ইলমে ফিকাহ, শায়েখ আবু গালিব মুহাম্মদ ইবনে হাসান বাকিল্লানী, শায়েখ আবু সাইদ ইবনে আবদুল করীম ও শায়েখ আবুল গানায়েম মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ (রহ.) প্রমুখের কাছে ইলমে হাদিস এবং শায়েখ আবু জাকারিয়া তাবরেয়ী (রহ.) কাছে সাহিত্যের উচ্চতর পাঠ লাভ করেন। বড়পীর অল্প বয়সেই মাদরাসার পরীক্ষা দিয়ে শ্রেষ্ঠ সনদ অর্জন করেন। মাত্র নয় বছর শিক্ষা অর্জন করে ১৩টি বিষয়ের ওপর সনদ লাভ করেন। হজরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) মহান আল্লাহর বাণী এবং প্রিয়নবী (সা.) এর কথামালা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে দীনের প্রচার ও প্রসার করেন। তার কথা শুনতে ছোট-বড়, ধনী-গরিব সবাই উপস্থিত হয়ে শুনত এবং সেই অনুযায়ী আমল করত। বড়পীরের মাধ্যমেই ইসলাম আগের অবস্থায় ফিরে এসেছিল। এ জন্যই তার উপাধি ছিল মুহিউদ্দীন।
বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। যা বর্তমানে বিভিন্ন দালিলিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব গ্রন্থের মধ্যে ‘ফতহুল গায়েব গুনিয়াতুত তালেবীন’, ‘ফতহুর রব্বানী’, ‘কালীদায়ে গাওসিয়া’ উল্লেখযোগ্য। মহান এ সুফি ব্যক্তি অবশেষে হিজরি ৫৬১ সনের ১১ রবিউস সানি মৃত্যুবরণ করেন। যারা বড়পীর সাহেবকে ভালোবাসে, তারাই বড়পীর সাহেবের এই ওফাতের দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালন করবে। মসজিদ, মাদরাসা ও খানকায় বড়পীরের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে স্মরণ করা হবে। অতঃপর মিলাদ জিকিরের পর মোনাজাতে দেশ ও জাতির জন্য দোয়া হবে। লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক