বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে বায়ুদূষণে শীর্ষে রয়েছে গাজীপুর। সেখানে বায়ুমান প্রতি ঘন মিটারে ২৬৩ দশমিক ৫১ মাইক্রোগ্রাম। দূষণের দিকে ঢাকা জেলা দ্বিতীয় ও নারায়ণগঞ্জ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে প্রতি ঘন মিটারে ৪৯ দশমিক শূন্য ৮ মাইক্রোগ্রাম নিয়ে সবচেয়ে কম দূষিত শহরের শীর্ষে রয়েছে মাদারীপুর জেলা। এর পরই রয়েছে যথাক্রমে পটুয়াখালী ও মেহেরপুর। বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে, যা গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়।
‘দেশব্যাপী ৬৪ জেলার বায়ুমান সমীক্ষা-২০২১’ শীর্ষক গবেষণার প্রতিবেদন তুলে ধরেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ ও গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকি, পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল প্রমুখ।
কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ক্যাপস ৬৪ জেলার বায়ুমান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে। গবেষণায় দেখা যায়, ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সর্বমোট ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ছিল প্রতি ঘন মিটারে ১০২.৪১ মাইক্রোগ্রাম, যা দৈনিক আদর্শ মানের (৬৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে প্রায় ১.৫৭ গুণ বেশি। গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বায়ুমান ছিল বাংলাদেশের আদর্শ মানের চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি। এসব জেলায় বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে- রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কার কাজ, মেগা প্রকল্প, আশপাশের ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো। গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, সবচেয়ে কম দূষিত শহর মাদারীপুর। এ জেলার বাতাসে পিএম-২.৫-এর মাত্রা ছিল প্রতি ঘন মিটারে ৪৯.০৮ মাইক্রোগ্রাম।
মাদারীপুরের পরের অবস্থানে রয়েছে পটুয়াখালী ও মেহেরপুর। এসব জেলায় বায়ুদূষণ কম হওয়ার কারণ প্রচুর গাছপালা ও প্রাকৃতিক জলাধার। এসব এলাকায় সংস্কার কাজের পরিমাণও কম। ৬৪টি জেলার মধ্যে শুধু ১০টি জায়গায় বায়ুর মান ভালো পাওয়া যায় (প্রতি ঘন মিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রামের নিচে)। সে জায়গাগুলো হলো- কুড়িগ্রাম (৬৩.৩৩ মাইক্রোগ্রাম), নাটোর (৬৩.১৯ মাইক্রোগ্রাম), জয়পুরহাট (৫৮.২৪ মাইক্রোগ্রাম), রাজবাড়ী (৫৮.২২ মাইক্রোগ্রাম), রাজশাহী (৫৬.৪১ মাইক্রোগ্রাম), পাবনা (৫৬.২২ মাইক্রোগ্রাম), সিরাজগঞ্জ (৫৫.২ মাইক্রোগ্রাম), মেহেরপুর (৫৩.৩৭ মাইক্রোগ্রাম), পটুয়াখালী (৫১.৪২ মাইক্রোগ্রাম) ও মাদারীপুর (৪৯.৩৮ মাইক্রোগ্রাম)। সংবাদ সম্মেলনে বায়ুদূষণ রোধে তিন মেয়াদে ১৫ দফা সুপারিশ জানানো হয়।
সুপারিশগুলো হচ্ছে- ক. স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ : শুষ্ক মৌসুমে সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা ও পরিবেশ অধিদফতরের সমন্বয়ে দূষিত শহরগুলোতে প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা; নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণস্থল ঘেরাও দিয়ে রাখা ও নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নেওয়া; রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা; অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়ানো এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা।
খ. মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ : সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিপুলসংখ্যক গাছ লাগানো ও ছাদবাগান করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করা, আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করা; দূষিত শহরগুলোর আশপাশে জলাধার সংরক্ষণ করা; আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে স্যান্ড ব্লকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ানো এবং সিটি গভর্নেন্সের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করা।
গ. দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ : নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ বাস্তবায়ন করা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো ও বায়ুদূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করা, গণপরিবহনসহ ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে বায়ুদূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্যনির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করা, পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস ও পরিবেশ আদালত চালু এবং কার্যকর করা।