বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় দলীয় সংস্কার কমিটিগুলোর কাজের অগ্রগতির বিষয় ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কাজ নিয়েও আলোচনা করা হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে (ভার্চুয়ালি) গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে দলটি তাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের আলোকেই সংবিধানসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করছে। এর মধ্যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন, এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃস্থাপন এবং প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।
একইসঙ্গে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার- এই তিন বিষয়কে সংবিধানের মূলনীতি ঘোষণা করার পাশাপাশি আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে না যাওয়ার প্রস্তাবও ঠাঁই পেয়েছে।
এর আগে, অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন লিখিতভাবে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব পাঠাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করে। এই কমিশন ইতোমধ্যে বিশিষ্ট নাগরিকসহ অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছে। আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তি বা সংগঠনের পরামর্শ, মতামত ও প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ রেখেছে কমিশন। এরপরই তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে।
এদিকে সংবিধানসহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের আলোকে বিএনপিও সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ তার প্রতিবেদন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছেন।
এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রতিবেদনও প্রায় চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। যথাক্রমে খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আবদুল মঈন খান এই দুই কমিটির প্রধান।
এর বাইরে স্থায়ী কমিটির সভায় স্থানীয় সরকার ও নারীবিষয়ক আরও দুটি সংস্কার কমিটি করার পরামর্শ আসে। এর একটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, অন্যটিতে সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সংস্কার কমিটিগুলোর তৈরি করা প্রতিবেদন বা প্রস্তাবগুলো সরকার গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দেবে।
এর আগে, অন্তর্বর্তী সরকার গত ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই এই কমিশনগুলোর প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এ অবস্থায় নানা সংস্কার আলোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এতে সাবেক সচিব এ এস এম মো. নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) হিসেবে সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তাহমিদা আহমেদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সব ঠিক থাকলে রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে তারা শপথ নেবেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা ইতোমধ্যে এই কমিশন গঠনকে নির্বাচনের পথে বড় অগ্রগতি বলে মনে করছেন।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কথা বলেছেন।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রয়েছে। তবে তাদের কথা কম বলে কাজ বেশি করতে হবে।
আলাল আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে এরই মধ্যে নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। দেশবাসী কমিশনের কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে।
বিএনপিই সংস্কারের জন্ম দিয়েছে দাবি করে এ সময় তিনি বলেন, সংস্কারের আকৃতি বিএনপির হাত ধরেই শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কাজ শুরু করেছে, আশা করি তা দ্রুত শেষ হবে।