বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বিএনপি নয়, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারই সম্পৃক্ত। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
সরকার ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২৬ মার্চের পর থেকে গত কয়েক দিনে বোধ হয় কয়েক হাজার গ্রেপ্তার করে ফেলেছে এবং শুনলে অবাক হবেন আমাদের চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকায় দলের (বিএনপি) কর্মীরা রাতে বাসায় থাকতে পারে না। ব্লক রেইড করছে, কেরানীগঞ্জে ব্লক রেইড করে আমাদের নেতাকর্মীদের অ্যারেস্ট করছে। কিছু বলতে গেলেই তারা বলে যে হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে।’
তিনি বলেন, ‘আরে হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত তো আপনারা। আপনারা বসেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসায় বসে মিটিং করে তাদের (হেফাজতে ইসলাম) সঙ্গে চুক্তি করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে কওমি মাতা হিসেবে উপাধি দেওয়া হয়েছে। আমরা হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলাম না আপনারা।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো সরাসরি বলেই ফেলেছেন এত কোটি টাকা দিয়েছি, আমরাই একমাত্র কাজ করছি। আর তো কেউ কাজ করছে না- এসব কথা বলেন। দায়িত্ব তো আপনারাই নিয়েছেন। দায়িত্ব তো পালন করতে হবে আপনাদেরকেই।’
তিনি বলেন, ‘সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনারা প্রতি পদে পদে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আপনারা জনগণের সব আস্থা হারিয়েছেন, বিশ্বাস হারিয়েছেন। এখন অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করেছেন। এই দেশটাকে একটা পু্লিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।’
২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে কয়েকটি বাম সংগঠন এবং হেফাজতে ইসলাম নামে একটি সংগঠনের প্রতিবাদ বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এখানে যেকোনো সংগঠনের, যেকোনো রাজনৈতিক দলের যেকোনো প্রতিবাদ করা তো তাদের অধিকার, এটা তার সংবিধানসম্মত অধিকার।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনি গণতন্ত্রের কথা বলবেন অথচ কাউকে প্রতিবাদ করতে দেবেন না, আপনি কাউকে কথা বলতে দেবেন না, অন্যায়গুলোকে তুলে ধরতে দেবেন না, ভুলগুলোকে চিহ্নিত করতে দেবেন না। তাহলে কিভাবে একটা সরকার চলতে পারে। সেটি তো আর যা-ই হোক গণতান্ত্রিক সরকার হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্ট আপনাদের একটা আছে, সেই পার্লামেন্টে আপনাদের লোকজন সব বসে আছে, আপনারাই নিশ্চিত করে দিয়েছেন কারা কারা পার্লামেন্ট সদস্য হবেন, কারা কারা হবেন না এবং সেই পার্লামেন্টে যা খুশি তাই আপনারা করছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা দিনও শুনিনি আমি যে করোনা নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে, একটা দিনও শুনিনি যে সেখানে জনগণের আর্থিক অবস্থা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে। সেখানে শুধু বন্দনা, বন্দনা আর বন্দনা-স্তুতি আমি শুনেছি। আজকে সমস্ত দেশে একটা ত্রুটির মহোৎসব চলছে।’
করোনা মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনায় এখন আমাদের আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো কিছু করার নেই। ভ্যাকসিন প্রথমবার যারা নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয়বার সবাই ভ্যাকসিন পাবেন কি না তা আমি জানি না। কারণ যা শুনতে পাচ্ছি যে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে। একজন কিছুদিন আগে বলেছেন যে একটা মাত্র দেশের ওপরে এই যে নির্ভর করে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা- এটাও তো একটা ক্রিমিনাল ওফেন্স। আপনাকে একটা সরকার চালাতে হলে অনেক পথ খোলা রাখতে হবে। আপনি চীনকে বলে দিলেন যে না, তোমার এটা আমার দরকার নেই, ফেরত দিয়ে দিলেন।’
তিনি টিকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আপনারা ভারত থেকে নেওয়া শুরু করলেন। তা-ও আবার অনেক বেশি দামে, তা-ও ব্যক্তিমালিকানায় একজন ব্যবসায়ীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য তার কাছ থেকে এই ভ্যাকসিন আপনি নিচ্ছেন। এটা গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট নেওয়া যেত। অন্য দেশগুলো নিচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘করোনা সমস্যা মোকাবেলা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এটা করার কোনো উদ্যোগ নেই। বিদেশিদের আহ্বান জানাচ্ছি অথচ দেশের ভেতরে আমরা জাতীয় ঐক্য করতেছি না।’
‘জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। জনগণের অংশীদারি ছাড়া এই সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব না। সরকারকে বলব, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করুন।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ‘করোনা মোকাবিলায় স্থানীয় সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনাসভা হয়। এতে জেএসডির প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন কার্য্করী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও ফারাহ খানের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজমুদার, জেএসডির কার্যকরী সভাপতি মো. সিরাজ মিয়া, আ ক ম আনিসুর রহমান খান কামাল, সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন তালুকদার, সহসভাপতি তৌহিদুল হোসেন বক্তব্য দেন।