বঙ্গ নিউজ বিডি প্রতিনিধি : বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর প্রধান হিসেবে মোহাম্মদ শাহিনুল আলমের নিয়োগ শুধু বিতর্কিত নয়, বরং তা পুরো জাতির জন্য একটি উদ্বেগের বার্তা বহন করে। জানা গেছে, শাহিনুল প্রাথমিকভাবে সংক্ষিপ্ত তালিকার শীর্ষ তিন প্রার্থীর মধ্যেও ছিলেন না। তার নাম পরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
এই নিয়োগ যোগ্যতার সম্পূর্ণ অবমাননা। শাহিনুল এমন একজন, যিনি বিএফআইইউ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব রাখেন। এর চেয়েও খারাপ বিষয় হলো, তিনি আগের ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় বিএফআইইউ-এর ডেপুটি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সরকারকে চরম দমনপীড়ন ও পদ্ধতিগত দুর্নীতির জন্য স্মরণ করা হয়। শাহিনুলের সেই শাসনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তার কর্তৃত্ববাদী এজেন্ডার প্রতি আনুগত্য অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। শাহিনুলের ভাতিজা, যিনি একজন অতিরিক্ত আইজিপি ছিলেন, তাকে জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের পর বরখাস্ত করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল, যা জনগণের আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করেছিল। এছাড়াও, শাহিনুলের বড় ভাই ছিলেন সেই ফ্যাসিবাদী সরকারের একজন প্রধান নেতা—একটি শাসন যাকে শোষণ, অবিচার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি আজও মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে গেঁথে রয়েছে। হাজারো শহীদ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ফ্যাসিবাদী শাসন ভেঙে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে। শাহিনুল আলমের মতো একজন ব্যক্তিকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া সেই আত্মত্যাগের প্রতি সরাসরি অপমান। এটি পক্ষপাতিত্বের প্রতীক এবং এমন এক শক্তির পুনরুত্থানের ইঙ্গিত, যা বিপ্লব দূর করার জন্য সংঘটিত হয়েছিল।
এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। জাতি এমন একজন নেতাকে এই পদে দেখতে চায়, যিনি যোগ্যতা, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের দক্ষতা রাখেন। সাক্ষাৎকারের শীর্ষ প্রার্থী, যিনি দক্ষতা এবং বৈশ্বিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ, তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া উচিত।
এটি কেবল একটি নিয়োগের বিষয় নয়, এটি জাতির অন্তরাত্মার প্রশ্ন। এটি সেই শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রশ্ন, যারা স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং স্বচ্ছতার জন্য জীবন দিয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণ চুপ করে বসে থাকবে না, যখন ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মত্যাগকে পায়ের নিচে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। গণতন্ত্র, যোগ্যতা, এবং সততার নীতিগুলো রক্ষা করতে হলে এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই বাতিল করতে হবে।