তারপরও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া অসহায় শ্রমিকদের চাকরি বাঁচাতে হলে নির্ধারিত দামের দ্বিগুণেরও বেশি টাকায় বিমান টিকিট ক্রয় করতে হবে। একই সাথে দেশটিতে গিয়ে নিজ খরচে হোটেলে সাত দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের জন্য অতিরিক্ত আরো অর্ধলক্ষাধিক টাকা গুনতে হবে।
এমন শর্ত মেনেই যারা এবার সৌদি আরব যাওয়ার চিন্তা করছেন, শুধু তাদেরকেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরবর্তী ফ্লাইটে ওঠার টিকিট রি-কনফার্ম করার সুযোগ দেয়া হবে। গতকাল দূর-দূরান্ত থেকে যেসব যাত্রী (সৌদিগামী) মতিঝিল বিমানের বলাকা অফিসে গেছেন তাদেরকে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এসব তথ্য জানিয়ে দেয়া হয়।
গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, সোমবার রাত ১০টায় রিয়াদের উদ্দেশে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। বিমানের ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে পাইলট খালি নিয়ে গেলেও ফেরার সময় ২০০ যাত্রী নিয়ে ফেরার কথা রয়েছে। তবে সৌদি সরকারের বেঁধে দেয়া নতুন নিয়মে এখন পর্যন্ত কোনো যাত্রী টিকিট বুকিং দিয়েছেন কি না তা গতকাল বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
সৌদিগামী কর্মীদের বাড়তি দামে বিমান টিকিট ক্রয় করা এবং সৌদি সরকারের নতুন শর্তারোপ অনুযায়ী একজন কর্মীকে কোয়ারেন্টিন বাবদ আরো অতিরিক্ত ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য বেনজির আহমদ গতকাল বলেন, এখন সৌদি সরকার তার দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য বিদেশীদের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করার আইন করেছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কী করণীয় থাকতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা যেমন বিদেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে এলে তাকে কোয়ারেন্টিন করানো বাধ্যতামূলক করেছি। ঠিক তেমনি তারাও তাদের দেশের স্বার্থে কোয়ারেন্টিন করা বাধ্যতামূলক করেছে। তারা যেহেতু নিয়ম করেছেন, সেহেতু সেই নিয়ম মেনেই কর্মীদেরকে দেশটিতে পাঠাতে হবে। তবে কোয়ারেন্টিন বাবদ হোটেলে থাকা-খাওয়া এবং মেডিক্যাল টেস্ট করানো বাবদ অতিরিক্ত যে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হবে কর্মীদের সেটি আসলেই তাদের পক্ষে জোগাড় করা কষ্টসাধ্য হবে। আমি আপনার মাধ্যমে মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়কে অনুরোধ জানাব, বিষয়টি নিয়ে তারা যেন সৌদি সরকারের সাথে নেগোশিয়েশন করে একটি সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছাতে পারেন। যদি কোয়ারেন্টিন খরচ কমানো যায়, তাহলে আমাদের কর্মীরা অনেক উপকৃত হবেন।
এর আগে বায়রার সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৮০ হাজার টাকায় টিকিট কেটে তারপর একজন কর্মীকে সৌদি আরবে পাঠাতে হচ্ছে। অথচ এই রুটে একটি বিমান টিকিটের দাম সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এটা জুলুম। পৃথিবীর কোনো দেশেই এমন নিয়ম নেই। শুধু বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। এভাবে চলতে পারে না। এটার অবশ্যই বিহিত হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
এ দিকে ২০-২৪ মে পর্যন্ত যেসব সৌদিগামী যাত্রীদের ফ্লাইটে টিকিট রি-কনফার্ম করা ছিল তাদের মধ্যে থেকে যারা সৌদির দেয়া সব শর্ত মেনে এবং কোয়ারেন্টিন বাবদ অতিরিক্ত টাকা খরচ করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের কাছে গতকাল থেকে রি-কনফার্ম করার কাজ শুরু হয়েছে ঢাকার মতিঝিলের বিমানের বলাকা অফিসে। এর জন্য গতকাল সকাল থেকেই বিদেশগামী যাত্রীদের ওই কার্যালয়ের সামনে ভিড় করতে দেখা যায়। একই চিত্র ছিল কাওরানবাজারের সাউদিয়া অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের টিকিট সেলস কাউন্টারের সামনের রাস্তায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেছেন, হোটেল বুকিং না হওয়ার কারণে তাদের অনেকের টিকিট রি-কনফার্ম করানো যাচ্ছে না। ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল বেলা আড়াইটার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের বক্তব্য নিতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি টেলিফোন ধরেননি। এর আগে সৌদি সিভিল এভিয়েশনের দেয়া কঠিন শর্ত পালন করে ফ্লাইট চালাতে পারবে কি পারবে না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এই নিয়মে যাত্রী পাওয়া যাবে তো?
এ কারণে বিমান কর্তৃপক্ষ ২০-২৪ মে পর্যন্ত ঢাকা থেকে সৌদিগামী সবগুলো (১২টি) ফ্লাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে বিমান কর্তৃপক্ষ আজ সোমবার থেকে সীমিত আকারে এবং ছোট এয়ারক্র্যাফট দিয়ে (বোয়িং-৭৩৭) রিয়াদ, জেদ্দা ও দাম্মাম রুটে ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। একই সাথে আজ থেকেই বন্ধ থাকা দুবাই রুটেও বিমানের অপর একটি ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। যদিও দুবাইগামী ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে খালি যাবে। ফিরতি ফ্লাইটের যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফেরার অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার। তবে কুয়েত, বাহরাইন, মাস্কাট, আবুধাবি ও নেপালগামী বিমানের শিডিউল ফ্লাইট আপাতত বন্ধই থাকছে। সূত্র: নয়া দিগন্ত