বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার পরিবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে যুক্তরাজ্যে নিতে আগ্রহী প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এজন্য লন্ডনের বিকল্প হিসাবে সিঙ্গাপুরে নেয়ার কথাও চিন্তায় রয়েছে পরিবারের।
তবে সিঙ্গাপুরেও বাংলাদেশ থেকে যাত্রী প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এজন্য পরিবার ও দলে এখন দুবাই, সৌদি আরব কিংবা সুবিধাজনক বিকল্প দেশে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার কথা আলোচনা হচ্ছে। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এমন ব্যক্তির সৌদি আরবে যাওয়ার ব্যাপারেও কিছু বিধিনিষেধ মানার নিয়ম রয়েছে। এজন্য দলটির নেতা কর্মীরা বলছেন, বিধিনিষেধের কারণে লন্ডন, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবে যদি না যেতে পারনে, সেক্ষেত্রে সর্বশেষ বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দুবাই নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে। কারণ বিএনপি চেয়ারপারসন বেশিভাগ চিকিৎসা দুবাইয়ে করেছেন। কিন্তু এখনও পরিবার এবং দল লন্ডনকে প্রথম আগ্রহ দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা উনাকে লন্ডন নিতে চাচ্ছেন।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের কারণে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, সেক্ষেত্রে কি বিকল্প কোন চিন্তা রয়েছে- জানতে চাইলে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং উনার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সরকার উন্নত চিকিৎসার জন্য যে দেশে অনুমতি দেবে, আমরা উনাকে সেদেশেই নিয়ে যাবো। এজন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি রাখা আছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসায় তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য লিখিত আবেদন নিয়ে যান। আবেদনটি পাওয়ার পর তা মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের কাছে ওই দিন রাতেই পাঠানো হয়।
পরে বৃহস্পতিবার দাপ্তরিক কাজ শেষে বিকালে আইনমন্ত্রীর গুলশানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নথি নিয়ে যান আইন সচিব গোলাম সারওয়ার। ওই সময় আইনমন্ত্রী জানান, খালেদা জিয়ার আবেদনের বিষয়টি পর্যালোচনার পর দ্রুত সময়ে মতামত দিয়ে ফাইলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বিষয়টি সরকার মানবিকভাবেই দেখবে। সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার আর সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার রাতেই খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
অন্যদিকে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক অনুমতির অপেক্ষায় আছেন তার পরিবার ও দল। খালেদা জিয়ার বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের সুযোগ আছে কিনা তা নিয়ে মতামত প্রদান শেষে রোববার এ সংক্রান্ত নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
শনিবার মন্ত্রী বলেন, শনিবার ছুটির দিন থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নেই। তাই আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে নথি পাঠানো সম্ভব হয়নি। আমার আইনি মতামতসহ রোববার সকালে কাগজপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কী মতামত দেয়া হয়েছে- জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, কী মতামত দিয়েছি, সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই হয়তো জানাবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে নেয়ার বিষয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, উনার পরিবার এবং আমাদের মহাসচিবও আবেদন জানিয়েছেন। এখন এটা সরকারের বিষয়, সরকার কবে নাগাদ এবং কিভাবে উনাকে যাওয়ার অনুমতি দেবেন। আর আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য যদি দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি দেয়ার পর মেডিকেল বোর্ড পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন। যখন অনুমতি জানাবেন তখন মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত জানাবে।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে কারাগারে যাওয়ার পর গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরু হলে পরিবারের আবেদনে সরকার দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। ৭৬ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সে সময় শর্তে দেয়া হয়, খালেদা জিয়াকে মুক্ত থাকার সময়ে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
বাংলাদেশ