বঙ্গনিউজবিডি রিপোর্ট : বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) যৌথ উদ্যোগে অর্থাৎ বাংলাদেশের উদ্ভাবিত করোনা কিটের ব্যবহারিক কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ দুপুর ১২ টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস শ্রেণি কক্ষে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে এর শুভ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আহসান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা কার্যক্রম চলছে। করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নির্ণয়ক এন্টিবডি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের ধরণ শনাক্তকরণ কার্যক্রম অর্থাৎ জেনোম সিক্যুয়েন্সিং নিয়ে একাধিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আজকে করোনা ভাইরাসের যে কিটটি উদ্ভাবিত হলো তাও গবেষণার ফলে সম্ভব হয়েছে। গবেষণার মাধ্যমেই একদিন ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিসিএসআইআর, বিএসএমএমইউ ও ঢাবি অর্থাৎ দেশে উদ্ভাবিত কিটটি শতগুণে ভালো। এটা এটি দেশের একটি বিরাট অর্জন। এর মাধ্যমে দেশের মানুষকে অত্যন্ত স্বল্প খরচে নির্ভুলভাবে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এই কিটটি উদ্ভাবনের ফলে সারা দেশে একটা সময়ে এই কিটটিকে সর্ববরাহ করা সম্ভব হবে এবং বিদেশ থেকে ডলার খরচ করে আমদানী করার প্রয়োজন হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও তরিৎ পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ করোনা মহামারীকে সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যন্যা প্রতিষ্ঠানের গবেষণার মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগে করোনা ভাইরাসের শনাক্তকরণের বিশ্বমানের একটি কিট উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, বেসিক সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শিরিন তরপদার, অধ্যাপক ডা. শিশু অনুষদে ডিন অধ্যাপক ডা.রঞ্জিত রঞ্জণ রায়, এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইব্রাহিম মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই কিটের ন্যূনতম শনাক্তকরণ ক্ষমতা ১০০ কপি ভাইরাস/মিলি, যেখানে আমদানি করা অন্য কিটগুলোর শনাক্তকরণ ক্ষমতা ১ হাজার কপি ভাইরাস/মিলি। অর্থাৎ বিসিএসআইআরের কোভিড কিট দ্বারা একেবারেই ন্যূনতমসংখ্যক ভাইরাসকে শনাক্ত করা যাবে। ফলে রোগের উপসর্গ প্রকাশের আগেই ভাইরাসের উপস্থিতি জানা সম্ভব হবে। অত্যন্ত স্বল্প ব্যয়ে আরএনএ এক্সট্রাকশনের পদ্ধতিতে উদ্ভাবন করা হয় এ কিট। এ জন্য কিটের উৎপাদন খরচ বাণিজ্যিক কিটগুলোর চেয়ে কম। তাই উদ্ভাবিত এই কিট দ্বারা প্রতিটি শনাক্তকরণ পরীক্ষায় খরচ হবে ২৫০ টাকা।
এই করোনা কিটের বৈশিষ্ট হলো-ÑBCSIR COVIDER টি M জিনকে টার্গেট করে করা হয়েছে। M জিনের Mutation তুলনামূলক কম ও বিশ্বে প্রথম M জিনকে টার্গেট করে কোভিড ডিটেকশন কিট আবিষ্কৃত হয়েছে, উক্ত কিটটির জন্য যে primar এবং probe ব্যবহার করা হয়েছে তা BCSIR এর বিজ্ঞানীগণ কর্তৃক ডিজাইনকৃত, যার ফলে কিটটি বাজারে প্রচলিত এর চেয়ে আলাদা। উদ্ভাবিত কিট এর Specificity, Sensitivity এবং Accuracy গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড এর সমমান ও বাণিজ্যিক কিটগুলি থেকে উন্নত মানের। কিটটির Limit of Detection (IOD) ১০০ কপি ভাইরাস/মিলি যা বাজারে প্রচলিত কিটের চেয়ে অনেক কম, তাই এই কিটটি ইনফেকশনের শুরুতেই কোভিড ১৯ শনাক্ত করতে সক্ষম। এই কিটটি সকল ধরনের ভ্যারিয়েন্ট (Alpha, Beta, Gamma, Delta, Omicron) ইত্যাদি শনাক্ত করতে সক্ষম। উক্ত কিটটি Glycogen ব্যবহার করে RNA extraction পদ্ধতি উদ্ভাবন করায় স্বল্প খরচে কোভিড-১৯ টেস্ট করতে সক্ষম।