বঙ্গ নিউজ বিডি ডেস্ক : ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রায়ই ভুল বার্তা পরিবেশিত হচ্ছে। এ কারণে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এবং বোঝাপড়া গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরা। শুক্রবার এক সেমিনারে তারা এ গুরুত্বারোপ করেন।
বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতীয় সাধারণ মানুষের উপলব্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইস্যুগুলোর প্রতি জনগণের ধারণা মিডিয়া চিত্রায়নে প্রভাব ফেলে। তাই, ভারতীয় নাগরিক সমাজের সদস্য, আমলা এবং সাধারণের সাথে আমাদের আরো বেশি যোগাযোগ এবং সম্পৃক্ততা গড়ে তুলতে হবে।’
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে ‘জুলাই গণপরিষদ’ আয়োজিত ‘ভারতীয় গণমাধ্যমে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পথ চিত্রায়ন: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে শিক্ষাবিদ এবং বুদ্ধিজীবীরা গণ-অভ্যুত্থান এবং দেশের সংখ্যালঘু ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতীয় বর্ণনার বিরুদ্ধে নতুন এবং কার্যকর বাংলাদেশী বর্ণনা এবং তথ্যের পাল্টা প্রবাহ বিকাশের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খোরশেদ আলম বলেন, ‘ভারতীয় রাষ্ট্রীয় নীতি, আওয়ামী লীগের নীতি এবং ভারতীয় মিডিয়া নীতিগুলো একইভাবে আখ্যান বিকাশের জন্য কাজ করছে এবং এইভাবে, আমাদের সেই বর্ণনাগুলোকে মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশী বর্ণনা এবং বক্তৃতার বিকাশ ঘটাতে হবে।’
আলোচনা সভার শুরুতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানকে ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘ইসলামপন্থী’ বা জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন হিসেবে হাজির করা হচ্ছে। হাসিনার পতনের পর এবার হিন্দু তথা সংখ্যালঘুরা বিপদে পড়ে যাবেন- এমন যুক্তি উপস্থাপন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ না থাকলে হিন্দু জনগোষ্ঠী বিপদে পড়ে যাবে বা ইতিমধ্যেই পড়ে গেছে- এমন বয়ান ভারতের মিডিয়া পাড়াতে খুব জোরেশোরে চলছে। এই বয়ানের ভেতরে যেমন একদিকে বাংলাদেশকে একটি ‘মৌলবাদী’ দেশ হিসেবে তুলে ধরা হয়, তেমনি আওয়ামী লীগকে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ‘ত্রাণকর্তা’ বা বন্ধু রূপে তুলে ধরা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব জাহেদ উর রহমান বলেন, বাংলাদেশের হিন্দুরা ভয়ংকর রকমের সংকটে আছে, ভারতীয় মিডিয়াগুলো এ ধরনের ন্যারেটিভ তৈরী করতে চায়। তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ বিষয়ে। আমরা যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে আছি। ভারতের সফট পাওয়ারকে যেন আন্ডারমাইন্ড না করি। ভারতের সিভিল সোসাইটি জনগণের সাথে আমাদের সংযোগ বাড়াতে হবে। আমাদের পাল্টা ন্যারেটিভ তৈরীতে কাজ করতে হবে।
গণমাধ্যম তাত্ত্বিক সুমন রহমান বলেন, ভারত ও পাকিস্তান যখন ক্রিকেট খেলে, তখন কোনো বাংলাদেশী পাকিস্তানকে সমর্থন করলে ভারতীয়রা মন্তব্য করে- ‘তোমাদের একটা দেশ দিলাম। তারপরও তোমাররা এত অকৃতজ্ঞ।’ আমি মনে করি এখানে ভারতের মিডিয়াগুলোও এই ধারণা পোষণ করে। তাদেরকে এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
এএফপির ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিন শিশির বলেন, ভারতীয় মিডিয়ায় মোটা দাগে ডিসইনফরমেটিভ। যেমন- এই আন্দোলনটা ইসলামিস্টদের। এমন ন্যারেটিভ প্রচার করা হচ্ছে। এগুলো সমাধানের উপায় আছে। ভারতের সাংবাদিকদের সাথে আমাদের ভালো যোগাযোগ নাই। যেটা আছে, সেটা হলো আওয়ামী যোগাযোগ। সূত্র : বাসস