জালালুর রহমান, মৌলভীবাজার : ভয়াবহ শব্দ দূষণে মৌলভীবাজার জেলাবাসী অতিষ্ঠ। এধরনের শব্দ দূষণে মৌলভীবাজার বাসীকে ক্রমশঃ বধিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শব্দের তীব্রতায় মানুষের নাক, কান ও গলায় নানা রকম জটিল উপসর্গ দেখা দিয়েছে। একই কারণে মানুষের আচরণে রুক্ষতা ও মেজাজে ভারসাম্যহীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত দেড় যুগের ব্যবধাণে মৌলভীবাজারে শব্দ দূষণ বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। শব্দ দূষণ রোধে আইন থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আইনের প্রয়োগের ব্যাপারে উদাসীন। যান বাহনের তীব্র হর্ণ, জেনারেটরের কর্কশ ধ্বনি, ভবণ নির্মাণের খট খট শব্দ, সিডি, ভিসিডি ও ক্যাসেটের দোকান থেকে ভেসে আসা সুর-ধ্বনি নাগরিক জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসেব অনুযায়ী শব্দের স্বাভাবিক সহনীয় মাত্র হচ্ছে ৪৫ জেসিবল। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় যেসব গাড়ী বা যানবাহন চলাচল করে এদের হর্ণ ১২০ থেকে ১৮০ জেসিবলের উপরে। এ শব্দ দূষণ জেলাবাসীর জন্য এখন এক ভয়াবহ পরিবেশ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ নামের একটি এনজিও সংস্থার গবেষনায় জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় শব্দ দূষণ এখন ভয়াবহ মাত্রায়। গবেষনার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৯৭ সালের পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত নিরব এলাকা হিসেবে পরিচিত। এসব স্থানে মোটর গাড়ীর হর্ণ বাজানো এবং মাইকিং করা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। এসব এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা দিনে ৪৫ জেসিবল এবং রাতে ৩৫ জেসিবল। সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একাধিক বিশেজ্ঞ ডাক্তার জানান, শব্দ দূষণ এখন সবত্রই ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। এর শিকার হচ্ছে জেলার সর্বস্তরের মানুষ। শব্দ দূষণ মানুষের স্নায়ুগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। ক্রমাগত শব্দ দূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে। তখন মানুষ আর স্বাভাবিক শব্দ কানে শুনতে পারেনা। কানের মধ্যে সব সময় এক ধরণের অস্বাভাবিক শব্দ হতে থাকে। ডাক্তারি ভাষায়, এটাকে টিনিটাস বলে কানের যন্ত্র ব্যবহার করেও সেভালো শুনতে পারেনা। প্রকৃত কথা হচ্ছে “শব্দ” দূষণ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ করছে আমাদের শিশুদের। তারা এসব কর্মকান্ডে মানসিকভাবে ভীত হয়ে পড়ছে। এতে করে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। শব্দ দূষণের কারণে মনোসংযোগের মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এর ফলে, শিক্ষার্থীরা লেখা – পড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।