বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: আসন্ন দুর্গাপূজা করতে হলে প্রতিটি মন্দিরের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে—এ রকম উড়োচিঠি পেয়েছেন খুলনার দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরের পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতারা। এ কথা প্রশাসন বা সাংবাদিকদের জানালে ‘কচুকাটা’ করা হবে বলে চিঠিতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর থেকে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে। কোনো কোনো মন্দির পূজা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বুধবার বিভিন্ন মন্দিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে এই চিঠি আসা শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এ ঘটনায় উপজেলার ভিন্ন চারটি মন্দিরের পক্ষ থেকে দাকোপ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
দাকোপের একটি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডাকযোগে চিঠি পাওয়ার পর থেকে তাঁদের মধ্যে একধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। বুধবার চিঠি পাওয়ার পর তাঁরা রাতে এলাকার মানুষকে নিয়ে সভা করেছিলেন। সেখানে বেশির ভাগ মানুষ পূজা না করার পক্ষে মত দেন। পরে সবাই মিলে পূজা করার সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন। এখন থেকেই এলাকায় প্রতিদিন পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তবে কিছু মন্দির কমিটি পূজা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে।
দাকোপের কামারখোলা সর্বজনীন দুর্গাপূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি শেখর চন্দ্র গোলদার বলেন, ‘এ বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে পূজা না করে খুব ছোট পরিসরে পূজা করার আলোচনা চলছিল। তবে এ ধরনের চিঠি পাওয়ার পর আমাদের সদস্যরা আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ বছর আমাদের পূজাটা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’
প্রতিটি চিঠি কম্পিউটারে কম্পোজ করা। তিনটি মন্দিরে পাঠানো চিঠি থেকে দেখা গেছে, সব কটি চিঠির বক্তব্য এক। হলুদ খামের ওপর প্রাপক মন্দির কমিটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। মন্দিরের সভাপতি–সম্পাদককে উদ্দেশে এসব চিঠি লেখা হয়েছে। চিঠির এক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হানিফের প্রজেক্টে যেমন করেছি, তোদের পরিণতিও তেমন হবে’।
হানিফের প্রজেক্ট বিষয়টা কী—জানতে চাইলে শ্রীনগর গ্রামের কয়েকজন জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের চিংড়িঘেরে ব্যাপক লুটপাট চলে। কয়েক দিন ধরে চলে সে লুটপাট। এখনো সেখানে থাকা ছোটখাটো জিনিসপত্র লুটপাট চলছে।
দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ওই উড়োচিঠির বিষয়ে শুক্রবার চারটি মন্দির থেকে জিডি করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। আমাদের পক্ষ থেকে মন্দির সুরক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর টিমসহ আমরা থানা থেকে নিয়মিত টহল দিচ্ছি। গ্রাম পুলিশ ও ইউনিয়নভিত্তিক পুলিশ কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক টহলে আছেন।’