ঘটনার পর পর স্বামী ও ভাসুর পলাতক রয়েছে। জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের অটোরিকশাচালক হারুনুর রশিদের সঙ্গে সাধনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাধনপুর গ্রামের আবু ছালেকের মেয়ে আইরিনের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকে যৌতুকের টাকার জন্য বারবার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া গতো আইরিনকে। এনিয়ে একাধিকবার সালিশও হয়েছে এলাকায়। ২১ জুলাই স্বামী হারুনুর রশিদ স্থানীয় এক প্রতিবেশীর দেয়া কোরবানির গরুর মাংস এনে আইরিনকে রান্না করতে দেন। আইরিন ওই মাংস রান্না করেন।
তবে, মাংস খেয়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন স্বাদ পাননি বলে অভিযোগ করেন। মাংসের স্বাদ তেতো হওয়ার ঘটনা প্রতিবেশীদেরও ডেকে দেখানো হয়। এ ঘটনায় হারুনুর রশিদ আইরিনকে কয়েকদফা পিটিয়ে জখম করে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত আইরিন ঘরের কাজ করলেও ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেন।
পরে শনিবার সকাল ৯টায় আইরিনকে আবারো মারধর করা হয়। এরপর পরিবারের লোকজন গোপনে আইরিনকে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় হাসপাতালে লাশ ফেলে কৌশলে সবাই পালিয়ে যায়।
আনোয়ারা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, গৃহবধূ আইরিনকে তার স্বজনরা মৃত অবস্থায় হাসপাতালে এনেছিল।
আইরিন আক্তারের শাশুড়ি নুর বানু গণমাধ্যমকে বলেন, মাংসের রান্না স্বাদ না হওয়ায় আইরিনকে আমার ছেলে পিটিয়েছে ঠিক, কিন্তু হত্যা করেনি। আমার ছেলে বলেছে, ওড়না পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। তবে কিভাবে আইরিন মারা গেছে, কোথায় ওড়না পেঁচানো হয়েছে আমি দেখিনি।
সাধনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাধনপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আইরিনের যৌতুকলোভী স্বামী হারুনুর রশিদের অত্যাচারে দফায় দফায় সালিশ বসে। সালিশে হারুনুর রশিদের দোষ প্রমাণিত হত। মূলত যৌতুক না পেয়েই মাংস রান্নার অজুহাতে আইরিনকে হত্যা করেছে।
আইরিনের বাবা আবু ছালেহ এবং মা শামশুন্নাহার গণমাধ্যমকে বলেন, আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তার স্বামী। হত্যার পর তারা আমার মেয়ের লাশ গায়েব করার চেষ্টা করেছিল। আমার মেয়ের হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বাঁশখালীর রামদাশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মিনহাজ মাহমুদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছে। এখন আইরিনের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে আইরিনের লাশ আইরিনের বাপের বাড়িতে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইরিনের বাবা-মা। বিষয়টি তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।