বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : কক্সবাজারে কর্মরত অবস্থায় জনৈক গায়ত্রী অমর শিং নামে এক এনজিও কর্মীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। এ নিয়ে পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে বাবুল আক্তার নিজেই স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুনের পরিকল্পনা করেন। আর এই পরিকল্পনা থেকেই বাবুলের নির্দেশনা অনুযায়ী নৃশংসভাবে খুন করা হয় মিতুকে।
এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তের ধারাবাহিকতায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বহুল আলোচিত মিতু হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ বছর পর বুধবার (১২ মে) চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে আরো একটি হত্যা মামলা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। ওই মামলায় বাবুল আক্তারকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই।
কে এই এনজিও কর্মী গায়েত্রী?
পুলিশের তদন্ত এবং মিতুর বাবার কাছ থেকে জানা গেছে সেই এনজিও কর্মীর পরিচয়। তার পুরো নাম গায়েত্রী অমর সিংহ। তিনি বর্তমানে সুইজারল্যান্ড অথবা পূর্ব আফ্রিকার কোনো দেশে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের প্রটেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। মামলার বিষয়ে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গায়েত্রী অমর সিংহ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন। তখনই তার সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পর্ক হয়। ব্যক্তিগত জীবনে গায়েত্রী বিবাহিত এবং তার একটি ছেলে রয়েছে।
কক্সবাজারে বাবুল-গায়েত্রীর ঘনিষ্ঠতা
বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সাবেক শ্বশুরের দায়ের করা মামলার এজহার থেকে জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত থাকার সময় ২০১৩ সালে ইউএনসিসিআর এর কর্মী গায়ত্রী অমর শিংয়ের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। এই নিয়ে মিতুর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় মিতুর। কলহের সময় মিতুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন বাবুল। এরই মধ্যে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘ শান্তিমিশনে সুদানে ছিলেন বাবুল আক্তার। এই সময় বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোনটি চট্টগ্রামের বাসায় ছিল। ওই মোবাইল ফোনে মোট ২৯ বার ম্যাসেজ দেন গায়ত্রী অমর শিং।
সর্বশেষ মিতু হত্যার কয়েকমাস আগে বাবুল একটি ট্রেনিংয়ে থাকা অবস্থায় গায়েত্রী তার বাসায় দুইটি বই উপহার পাঠান। বই দুটির নাম-তালিবান ও বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট। তালিবান বইটির ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় গায়েত্রী নিজ হাতে একটি বার্তা লিখে দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমাদের ভালো স্মৃতিগুলো অটুট রাখতে তোমার জন্য এই উপহার। আশা করি এই উপহার আমাদের বন্ধনকে চিরস্থায়ী করবে। ভালোবাসি তোমাকে, গায়েত্রী।’
একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় গায়েত্রী তাদের প্রথম দেখা, প্রথম একসঙ্গে কাজ করা, প্রথম কাছে আসা, মারমেইড হোটেলে ঘোরাফেরা, রামু মন্দিরে প্রার্থনা, রামুর রাবার বাগানে ঘোরাফেরা এবং চকরিয়ায় রাতে সমুদ্রের পাশ দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি স্মৃতির কথা উল্লেখ ছিল। এছাড়াও বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট নামের বইয়ের ২য় পাতায় গায়েত্রীর নিজ হাতে ‘তোমার ভালোবাসার গায়েত্রী’।
মামলার বাদী এভাবেই বাবুল আক্তার ও গায়ত্রী’র হাতের লেখা মামলার এজহারে উল্লেখ করে আরো লিখেন, এই পরকীয়া প্রেমের কারণে বাবুল মিতুর দাম্পত্য অশান্তি চরমে পৌঁছে। বাবুল আক্তারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে মিতু প্রতিবাদ করলে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। এই নির্যাতনের বিষয়টি মিতু বাবা-মাকে জানিয়েছিল।
বাদী এজহারে লিখেন, তিনি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছেন গত ৬ জুন ২০১৬ ইং তারিখে পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে যে হত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন সেই মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাদী বাবুল আক্তার জড়িত থাকার প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়ায় উক্ত মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন সত্য, ধারা ৩০২/১০৯/৩৪ পেনাল কোড বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। এমতাবস্থায় মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচারের নির্মিতে সকল বিবাদীদের বিরুদ্ধে নিজে বাদী মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার, তার সোর্স মো. কামরুল ইসলাম শিকদার, এহতেশামুল হক ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াশিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম কালু ওরফে কসাই কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার ও শাহজাহান মিয়া।
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন এই মামলা দায়ের করার আগেই চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে মিতু হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদনেই বাবুল আক্তার ঘটনার সঙ্গে জড়িত মর্মে তথ্য পাওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া বাবুল আক্তারের মাধ্যমে সোর্স মুছা কিভাবে অন্য যুক্ত হয়েছে সেই বিষয়েও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তথ্য উল্লেখ রয়েছে। মোশাররফ হোসেনের এই মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া চলছে।