বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্ত হলেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। আজ বুধবার সকাল ৯টা ২১ মিনিটে আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভীর কাছে তাকে হস্তান্তর করেছেন কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের জেল সুপার হালিমা খাতুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পরীমনিকে নিতে কারাফটকে উপস্থিত ছিলেন তার খালু মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। পরে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে গাড়িতে পরীমনিকে নিয়ে কারাফটক ত্যাগ করেন তারা।
এর আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনিকে জামিন দেন আদালত। দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ জামিনের আদেশ দেন। দুপুর সোয়া ২টার দিকে পরীমনি জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়। প্রায় ২৬ দিন ধরে রিমান্ড ও কারাগারে থাকা পরীমনির পক্ষে এ দিন জামিন আবেদনের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান। শুনানিতে পরীমনির আইনজীবী বলেন, ‘পরীমনিকে তিন দফায় ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডের আগে ২৪ ঘণ্টার বেশি তাকে পুলিশ কাস্টডিতে রাখা হয়। রিমান্ডের নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্ত কর্মকর্তা সাদামাটা প্রতিবেদন দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মাদকের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রমাণাদি সেখানে আসেনি। আসামি শারীরিকভাবে অসুস্থ, রক্তশূন্যতা আছে। বারবার রিমান্ডে নেওয়ায় তার অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘পরীমনি জেলে থাকায় তার সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করা অনেক ছবি আটকে আছে। বিশেষ করে প্রীতিলতা সিনেমাটি। আসামি ২৭ দিন পুলিশ কাস্টডিতে ও জেলে আছেন। মামলার অবস্থা বিবেচনায় তিনি জামিন পেতে পারেন। আদালত মনে করলে তাকে জামিন দিতে পারেন।’
মজিবুর রহমান বলেন, ‘পরীমনি চিত্রনায়িকা। তার পরিচিতি আছে। জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না। তদন্তে বিঘœ ঘটাবেন না এটি আদালতকে নিশ্চিত করতে পারি। আর তার বিরুদ্ধে যে ধারায় মামলা হয়েছে সেটি প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ৫ বছরের সাজা হতে পারে। যে কোনো শর্তে তাকে জামিন দেন। পুলিশ তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করলে সে ট্রায়াল ফেস করবে। পলাতক হওয়া কোনো সম্ভাবনা নেই।
আসামিপক্ষের পর রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট র্যাব তার বাসায় অভিযানে যায়। তার বাসার সামনে র্যাব এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু সে দরজা খোলেনি। পরে দরজা খুললে র্যাব ভেতরে প্রবেশ করে। তার বাসায় ১৮.৫ লিটার মদ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও অনেক খালি বোতল পাওয়া গেছে। র্যাবকে বাইরে এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে তারা মদের বোতলগুলো খালি করে। এ ছাড়া তার বাসা থেকে এলএসডি, মাদক আইস পাওয়া যায়। মাদক যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। পরীমনি মদের আসর বসিয়ে মাদক সেবন করতেন।’
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘অনেক মাদক মামলা হচ্ছে। দীর্ঘদিন কারাবাসের পরও জামিন হচ্ছে না। আইন সবার জন্য সমান। পরীমনির বাসা থেকে এলএসডি ও আইস নামক ভয়াবহ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকের পরিমাণ বেশি, কাস্টডি কম। তাই তার জামিনের বিরোধিতা করছি।
আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে অসুস্থ, নারী, অভিনেত্রী, মাদকের পরিমাণ বিবেচনায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় পরীমনির জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনের পর এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘জামিন পাওয়া একটা অধিকার। তবে আমরা জামিনের বিরোধিতা করেছি। আদালত যেটি ভালো মনে করেছেন সেটিই আদেশ দিয়েছেন। এতে আমাদের কিছু করার নেই।’
গত ৪ আগস্ট বিকাল ৪টার পর পরই বনানীর ১২ নম্বর রোডের পরীমনির বাসায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। এ সময় বাসা থেকে ১৮.৫ লিটার বিদেশি মদ, চার গ্রাম আইস, এক স্লট এলএসডি এবং একটি পাইপ জব্দ করা হয়। ওই ঘটনায় র্যাব ১-এর কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান মাদক আইনে একটি মামলা করেন। পরীমনির মামলায় বলা হয়, পরীমনি এসব মাদকদ্রব্য কবির নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংগ্রহ করে বাসায় রাখতেন। মামলায় কবিরের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা উল্লেখ নেই। একই মামলায় আবার র্যাব দাবি করেছে, চিত্রনায়িকা পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করতেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যে ধারায় পরীমনির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারলে তার সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
ওই মামলায় গত ৫ আগস্ট পরীমনির চার দিনের ও গত ১০ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ড পাঠান আদালত। ওই রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময় মামলায় তৃতীয়দফা রিমান্ড আবেদনে গত ১৯ আগস্ট পরীমনির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই রিমান্ড শেষে গত ২১ আগস্ট জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পরীমনিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। পরের দিন ২২ আগস্ট সিএমএম আদালতের জামিন নামঞ্জুর ওই আদেশের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে পরীমনির পক্ষে জামিন আবেদন দাখিল করা হয়। বিচারক ১৩ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির দিন ঠিক করেন। জামিন শুনানির দিন আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর ২১ দিন বিলম্বে ধার্য হওয়ায় তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীমনির আইনজীবী জেডআই খান পান্না ও মো. মজিবুর রহমান।
গত ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট ২ দিনের মধ্যে কেন জামিন শুনানির নির্দেশ দেওয়া হবে না- এ মর্মে বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কারণ দর্শানোর রুল জারি করেন। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের বেঞ্চ ওই আদেশ প্রদান করেন। গত রবিবার হাইকোর্টের ওই আদেশ পাওয়ার পর বিচারক ইমরুল কায়েশ হাইকোর্টের রুলের জবাব দেওয়ার আগেই ৩১ আগস্ট জামিন শুনানির তারিখ পুনর্নির্ধারণ করে এগিয়ে আনেন। সে অনুযায়ী গতকাল শুনানি নিয়ে জামিন দেওয়া হয়। এদিকে আদেশের পর মঙ্গলবার বিকাল থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারা ফটকে স্থানীয় উৎসুক জনতা ভিড় জমান পরীমনিকে একনজর দেখার জন্য।
উল্লেখ্য, গত জুনে রাজধানীর আশুলিয়ায় অবস্থিত বোট ক্লাবের ঘটনায় আলোচনায় আসেন নায়িকা পরীমনি। আশুলিয়ার এ ক্লাবে গভীর রাতে তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনেন ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে গত ১৪ জুন তিনি ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় নাসির ইউ মাহমুদ ও তার সহযোগী পরীমনির বন্ধু তুহিন সিদ্দিকী অমি গ্রেপ্তার হন এবং সম্প্রতি নাসির উদ্দিন জামিন পেয়েছেন।