লাইসেন্স নবায়নবিহীন রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) করতে অনিয়ম কিংবা কোভিড পরীক্ষা করে অবৈধভাবে অর্থ লুটপাটের মতো ঘটনার কারিগর তিনি।
ওই সময়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের নতুন আরও একটি পরিচয় মিলেছে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর ছিলেন! এনআরবি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন ওই পরিচয়।
খোদ এনআরবি ব্যাংকের ঋণের প্রোপোজালের নথিপত্রে এমন জাল পরিচয় উল্লেখ করেছিলেন প্রতারক সাহেদ।
দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, মো. সাহেদ পরিচয় দিয়ে ঋণ পেতেই ওই পরিচয় ব্যবহার করেছিলেন।
এনবিআর ব্যাংক থেকে নথিপত্র সূত্রে দেখা গেছে, মো. সাহেদ কর্মজীবনের পরিচয়ের জায়গায় বর্ণনা দিয়েছেন তিনি ১৯৮৩ সালের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করে ২০০১ সালে মেজর হিসেবে অবসর নেন। শুধু কি তাই, ব্যাংকে সরবরাহ করা জাতীয় পরিচয় পত্রের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অর্থ্যাৎ জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল সম্পূর্ণ জাল।
এনআরবি ব্যাংক থেকে হাসপাতালের নামে ঋণ বাবদ দেড় ১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২২ জুলাই মামলা করেছিল দুদক। যার তদন্তের দায়িত্ব পালন করছেন উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম। আর ওই সব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই মো. সাহেদকে ১৯ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তবে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এনআরবি ব্যাংক থেকে সরবরা করা বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। যেখানে মো. সাহেদ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি ১৯৮৩ সালের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করে ২০০১ সালে মেজর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
এছাড়াও নর্দান ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবেও নিজেকে পরিচয় দেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বর্ণনায় তিনি নিজেকে রিজেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মুনলাইট রিসোর্ট, ম্যাক্স শিপিং ও ম্যাক্স সিকিউরিটিংয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আয় হয় বলে উল্লেখ করেছিলেন প্রতারক সাহেদ।
তিনি আরও বলেন, এনআরবি ব্যাংকে জমা দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রটি যাচাই-বাছাইয়ে জাল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ব্যাংকে মো. সাহেদের ২৬৯২৬১৮১৪৫৮৮৫ নম্বরের একটি জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়েছিলেন। যা নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজ অনুসারে অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ হুবহু জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো তৈরি করা জাল এনআইডিটির ইস্যুর তারিখে ২০০৮ সালের ২৫ এপ্রিলের কথা উল্লেখ করা হয়।
দুদকে পাঠানো নির্বাচন কমিশনের সহকারী প্রোগ্রামারের স্বাক্ষরে দেওয়া চিঠিতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রেরিত এনআইডি নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে অনুসন্ধান করে দুটি এনআইডি নম্বর পাওয়া গেছে। যার একটি লক করা ও অন্যটি ডুপ্লিকেট হিসেবে কর্তন করা অবস্থায় রয়েছে।
এক কোটি ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬৫ টাকা আত্মসাতের মামলায় সাহেদ ছাড়াও অন্যান্য আসামিরা হলেন- রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইব্রাহিম খলিল, এনআরবি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসই ব্যাংকিং) ওয়াহিদ বিন আহমেদ এবং কর্পোরেট হেড অফিসের সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার মো. সোহানুর রহমান।
ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর রিজেন্ট হাসপাতালের নামে হিসাব খোলা হয়। চলতি হিসাবটি খোলার সময় সাহেদের কোনো টাকা জমা হিসাবে গ্রহণ করা হয়নি। ছিল না ঋণের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত জামানত। ঋণ বিতরণের পূর্বে বা পরে যথাযথ তদারকিও করা হয়নি।