ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : শ্রাবণী রানী দারিদ্র্যকে জয় করে চলতি বছর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন; কিন্তু খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তার। হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি। চোখ মুছে বলেন,তার কি এই স্বপ্ন পূরণ হবে!
বাবা শ্যামল চন্দ্র বর্মণ অগভীর নলকূপ মেরামত মিস্ত্রি আর মা সুবাসি রানী গৃহিণী।
সামান্য আয়ে কোনো রকমে চলছে পরিবার। এ দম্পতির মেয়ে শ্রাবণী রানী সব বাধা জয় করে এ বছর রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এ খবরে খুশির সঙ্গে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পরিবারটি। মেডিকেল কলেজে পড়াশুনার খরচ জোগাড় হবে কিভাবে সেই আতঙ্কে কাটছে তাদের দিন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলার হাট ইউনিয়নের উত্তর বোয়ালিয়া গ্রামের মেয়ে শ্রাবণী তিন বোনের মধ্যে মেজো (দ্বিতীয়)। তার বড় বোন শ্যামলী রানী বিএসসি নার্সিংয়ে পড়ালেখা করছেন। ছোট বোন সিমা রানী অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী।
একদম অজপাড়া গাঁয়ে এক চিলতে জমির উপরে তাদের বসতভিটে। ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো সম্বল নেই শ্রাবণীর বাবার। টিনের বেড়া ও টিনের চাল দিয়ে তৈরি ঝুপরি ঘরে থাকেন পরিবারটি। একটি ছোট্ট ইটের ঘর থাকলেও নেই দরজা নেই জানালা। মেঝেও কাঁচা। তিন বেলা খাবার জোটানোই শ্যামল চন্দ্রের নাভিশ্বাস উঠে যায়।
অদম্য শ্রাবণীর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগে একে অপরকে জড়িয়ে কাঁদলেন পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার বিকালে ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় শ্রাবণীর সঙ্গে। পাশে ছিলেন তার মা-বাবা ও দুই বোন।
শ্রাবণী জানান, ২০২২ সালে ঢোলার হাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। বিজ্ঞান বিভাগে পান গোল্ডেন জিপিএ-৫। ২০২৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে। সেবারও পান জিপিএ-৫।
মেয়ের এত বড় সাফল্যে একবার হাসছেন একবার কাঁদছেন মা সুবাসি রানী। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মেয়ে ডাক্তারিতে ভর্তির সুযোগ পাইছে। শুনেছি অনেক টাকা লাগিবে, হামেরা এত টাকা কুনঠে পামো।
চোখ মুছতে মুছতে মা বলেন, শ্রাবণীর বাবার যে অবস্থা তাতে তিনবেলা খেয়ে বেঁচে থাকাই কষ্ট। তার ওপর তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানো আমাদের মতো পরিবারের পক্ষে ভীষণ কষ্টসাধ্য।
শ্রাবণীর বাবা শ্যামল চন্দ্র বর্মণ বললেন, সেখানে ওর জন্য প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করার ক্ষমতা আমাদের নাই। জানি না এ খরচ কিভাবে জোগাড় করব।
শ্রাবণীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাচেলো দাস বলেন, শ্রাবণী লেখাপড়ায় যেমন মেধাবী, তেমনি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সংগীত নৃত্য ও স্কাউটিংয়ে দক্ষ। সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করে। তারা তিন বোন মেধাবী। তবে আর্থিক দৈন্যতা বারবার তাদের পেছনে ঠেলে দেয়।
স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মণ বলেন, মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা শ্রাবণীর বাড়িতে এসেছিলেন উপহার নিয়ে। পরিবারটির অভাব অনটন দেখে শ্রাবণীকে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
সাংস্কৃতিক কর্মী নিকুঞ্জ বর্মণ বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা এমন আশ্বাস দিয়ে থাকেন, পরে ভুলে যান। তিনি সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় শ্রাবণীকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।