জালালুর রহমান, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের কুলাউড়াতে আর মাত্র দুই দিন বাকি। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততোই মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনে বহিরাগতদের আগমন বাড়ছে। বহিরাগতদের আগমণ বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষসহ ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা বেড়েই চলেছে। ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার (৪/জানুয়ারি/২০২৪) ইং দুপুরে তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী ও সাবেক এমপি এম এম শাহীন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান, বিপিএম (বার) পিপিএম এর কাছে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে বিশৃঙ্খলাকারীদের নিয়ন্ত্রণ এবং বহিরাগতদের বিতাড়িত করার জন্য একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন বলে তিনি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। অনুলিপি দেয়া হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশনারবৃন্দ ও সচিব বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, মৌলভীবাজার, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জকে। লিখিত অভিযোগে এম এম শাহীন উল্লেখ করেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে কুলাউড়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যেই এর আলামত স্পষ্ট হয়েছে। প্রতিদিনই প্রতিদ্বন্দ্বী দু-তিনজন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রদর্শনসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে। নির্বাচন যত সন্নিকটে আসছে, সংঘাত-সংঘর্ষের শঙ্কা তত বাড়ছে। কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগত লোকজন এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। বিভিন্ন বাসা বাড়ী ও হোটেলে শত বহিরাগত লোকেরা অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচনের দিন এই বহিরাগতরা ভোটের পরিবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, সরকার, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসনের একান্ত চাওয়া-যেকোনো মূল্যে এবারের নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করা। কিন্ত কুলাউড়ার আইনশ্ঙ্খৃলা পরিস্থিতি উন্নত ও বহিরাগতদের বিতাড়িত না করা হলে মৌলভীবাজার-২ আসনের নির্বাচন দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। উল্লিখিত বিষয়াদি বিবেচনা করে দ্রুত বিশৃঙ্খলা কারীদের নিয়ন্ত্রণ এবং বহিরাগতদের বিতাড়িত করে কুলাউড়ায় স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান প্রতিদ্বন্ধি এই প্রার্থী।
কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে কুলাউড়ায় বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েই চলছে। এই বহিরাগতরা আবাসিক হোটেল, বিভিন্ন প্রার্থীসহ তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করেছেন। ভোটারদের ধারণা দলগুলোর প্রার্থীরাই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য এই বহিরাগতদের আগমন।
জয়চন্ডী ইউনিয়নের রহমত মিয়া ও ভূকশিমইল ইউনিয়নের বারিক মিয়া বলেন, এবার ভোটের যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে কোনো সাধারণ ভোটার স্বা”ছন্দে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন না। এ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল (নৌকা), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি এম এম শাহীন (সোনালী আশঁ), স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমান (ট্রাক), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল মতিন (কাঁচি), জাতীয় পার্টির আব্দুল মালিক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এনামুল হক মাহতাব (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের আছলাম হোসাইন রহমানী (মিনার) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মো. কামরুজ্জামান সিমু (কুলা)। কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-২ আসন। এ আসনের ১৩টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭২। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৩৫ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৭ জন। এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, বহিরাগতদের বিষয়ে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আমাকে ফোনে জানিয়েছেন। উনাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তবে অভিযোগের অনুলিপি এখনও পাইনি। তাছাড়া কাল থেকে সবধরণের নির্বাচনী সভা ও প্রচারণা বন্ধ থাকবে। এরপর যদি কোন বহিরাগতদের পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুলাউড়ায় ৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। যাতে অবাধ, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি।