ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি বিএনপির অনাস্থা ও জোটের শরিক দল হিসেবে যথাযথ মূল্যায়ন না করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনেছেন সংগঠনটির নেতারা।
বুধবার (১৪ জুলাই) পুরানা পল্টনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া। এসময় দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দীন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি বিএনপির অনাস্থা, বিএনপি মহাসচিবের শরীয়া আইনে বিশ্বাসী না হওয়ার বক্তব্য ও কারাবন্দী আলেমদের বিষয়ে রহস্যজনক নীরবতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন জমিয়ত নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, বিশেষ এক পরিস্থিতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে নিবাচনী ঐক্য গড়ে তোলে। এ ধারাবহিকতায় ঐক্যবদ্ধভাবে কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু অত্যন্ত দুখের সঙ্গে বলতে হয় যে, জোটের শরিক দলের যথাযথ মূল্যায়ন না করা, সম্প্রতি শরিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে মতামত না নিয়ে তিনটি আসনের উপনির্বাচন এককভাবে বর্জনের ঘোষণা করা, জোটের কোন কার্যক্রম না থাকা, বিএনপি মহাসচিবের শরীয়া আইনে বিশ্বাসী না হওয়ার বক্তব্য দেয়া, দেশব্যাপী আলেম উলামাদের জেলজুলুমের প্রতিবাদে কার্যকর কোন ভূমিকা না রাখা এবং জোটের শীর্ষ নেতা জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তিকালের পর বিএনপির পক্ষ থেকে সমবেদনা জ্ঞাপন না করা ও জানাজায় অংশগ্রহণ না করায় জমিয়তের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাই জমিয়ত মনে করে ২০ দলীয় জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করাই জমিয়তের জন্য কল্যাণকর। আজ থেকে জমিয়ত জোটের কোন কার্যক্রমে সক্রিয় থাকবেনা।
সূত্রমতে, হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় জমিয়তের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন— জুনায়েদ আল হাবিব, শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি, মনির হোসেন কাসেমী, খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী ও মোহাম্মদ উল্লাহ জামী।
জমিয়তের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি— জুনায়েদ আল হাবিব ও মনির হোসেন কাসেমী ছাড়া বাকিদের মুক্তির বিষয়টি ত্বরান্বিত করতে জোট-ছাড়ার বিষয়টি কাজে দেবে, এমনটি মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এতদিন পক্ষে-বিপক্ষে দুটি মত থাকলেও এখন জোট ছাড়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এখন দুই ভাগে বিভক্ত। উভয় অংশ বিএনপি-জোটের শরিক। ‘ভারপ্রাপ্ত’ হয়ে একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা জিয়াউদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) ও মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া (ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব)।
এই অংশের সভাপতি মাওলানা আবদুল মোমিন গত বছর মারা গেলে মাওলানা জিয়াউদ্দিন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান। এর পর এ বছর করোনা আক্রান্ত হয়ে নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তেকালের পর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হন মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি, যিনি গত এপ্রিল থেকে হেফাজতের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। আফেন্দির অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।