বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ঘটল একের পর এক অঘটন। ফিফা র্যাং কিংয়ের ৫১তম দল সৌদি আরবের কাছে র্যাং কিয়ের তৃতীয় স্থানে থাকা আর্জেন্টিনার হার দিয়ে শুরু। এরপর ২৪তম জাপানের কাছে পরাজয় র্যাং কিংয়ের ৭তম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন ও ১১তম জার্মানির, ২২তম মরক্কোর কাছে হেরে যায় র্যাংরকিংয়ের দ্বিতীয় দল বেলজিয়াম। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনের কাছে হেরে গেল লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। এতসব অঘটনের সাক্ষী কাতার বিশ্বকাপ।
এসবের মধ্যে ক্যামেরুনের কাছে ব্রাজিলের হারকেই সবচেয়ে বড় অঘটন মনে করা হচ্ছে। কেননা, বিশ্বকাপের মঞ্চে এই প্রথম আফ্রিকার কোনও দেশের কাছে হারল নান্দনিক ফুটবলের দেশ ব্রাজিল। তাই, এটিকে শুধু অঘটনই নয়, ব্রাজিলের জন্য কেলেঙ্কারিও বলছে অনেকে।
শুক্রবার দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে ক্যামেরুনের কাছে ০-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। ইনজুরি টাইমে ম্যাচের একমাত্র গোল ভিনসেন্ট আবু বাকারের। ডান দিক থেকে ভেসে আসা ক্রসে হেড করে ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে নিলেন তিনি। আবু বাকার তৃতীয় আফ্রিকান ফুটবলার যিনি বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে গোল করলেন। তবে গোলের উচ্ছ্বাসে জার্সি খুলে দ্বিতীয় হলুদ অর্থাৎ লালকার্ড দেখলেন তিনি।
অঘটনের তৃতীয় রাউন্ড স্পেন, পর্তুগালের পর ব্রাজিল। প্রথম দুই ম্যাচে ক্লিনশিট রেখেছিল তিতের দল। আশা ছিল, কাতার বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে গ্রুপের তিনটি ম্যাচই জিতেই সেমিফাইনালে যাবে ব্রাজিল। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। উল্টো হেরে বসল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
তিউনিশিয়া ম্যাচে দলে ন’টা পরিবিতন করেছিলেন ফ্রান্সের কোচ। যার ফলে ফরাসিদের খেলায় জমাটে ভাব ছিল না। হয়েছিল ছন্দপতনও। এদিনও যেন তারই পুনরাবৃত্তি। তবে একইসঙ্গে একাধিক সুযোগ নষ্ট, ফিনিশিংয়ের অভাব ডুবিয়েছে ব্রাজিলকে। গ্যালারিতে বসে দলের হার দেখলেন দলের অন্যতম প্রধান তারকা নেইমার।
প্রথম দুটি ম্যাচ জিতে আগেই শেষ ষোলোয় চলে গিয়েছে ব্রাজিল।
সেলেকাওদের সামনে শীর্ষস্থান ধরে রাখার লড়াই ছিল। কিন্তু এদিন দলে একাধিক পরিবর্তন করেন তিতে। এমনিতেই ব্রাজিল শিবির চোট-আঘাতে জর্জরিত। এছাড়াও একাধিক ফুটবলার ফুগছেন ফ্লুতে। তাই কোনও ঝুঁকি নেননি তিতে। তবে ফরমেশন একই রাখেন। ম্যাচের শুরু থেকেই আগ্রাসী ফুটবল খেলে ব্রাজিল। ১১ মিনিটে প্রথম সুযোগ। কিন্তু দলকে এগিয়ে দিতে পারেননি মার্টিনেল্লি। তার তিন মিনিট পরই ফ্রেডের ক্রস থেকে ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকারের হেড বাঁচিয়ে দেন ক্যামেরুন গোলকিপার এপাসি। বেশ কয়েকবার বিপক্ষের বক্সে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আবু বাকার। বিরতির ঠিক আগে গোল পেয়ে যেতে পারত। কিন্তু মিস করেন ক্যামেরুনের তারকা ফুটবলার।
দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল রক্ষণে চাপ বাড়ায় ক্যামেরুন। যাবতীয় আক্রমণের পেছনে অবু বাকার। তবে তার চারগুণ বেশি আক্রমণ ছিল ব্রাজিলের। গোল লক্ষ্য করে ২০টি শট নেয় সেলেকাওরা। কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাব। একের পর এক মিস করে গেলেন মার্টিনেল্লি, অ্যান্টনি, রদ্রিগোরা। যার ফলে নিজেরাই ক্যামেরুনকে ইতিহাস লেখার সুযোগ করে দেয়। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে মার্টিনেল্লির দূরপাল্লার শট বাঁচায় এপাসি। এরপরও অন্তত ৪-৫টি নিশ্চিত সুযোগ এসেছিল। কিন্তু গোলের দেখা নেই। ফাঁকতালে সুযোগ কাজে লাগিয়ে জয়সূচক গোল করেন আবু বাকার। আর এতে প্রথম আফ্রিকার দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে হারানোর নজির গড়ল ক্যামেরুন। যদিও তার প্রভাব গ্রুপের টেবিলে পড়েনি। প্রথম দল হিসেবেই শেষ ষোলোয় ব্রাজিল। দ্বিতীয় দল হিসেবে কোয়ালিফাই করল সুইজারল্যান্ড। সূত্র: এপি নিউজ, দ্য অ্যাথলেটিক, এবিসি নিউজ