বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: নেক কাজের মাধ্যমে মানুষের আমলের পাল্লা ভারী হয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়। তাই নেক কাজ করার সুযোগ থাকলেই তা আত্মনিয়োগ করার চেষ্টা করা আবশ্যক। বিশেষ করে যেসব কাজের ব্যাপারে প্রিয় নবী (সা.) বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়েছেন, সেগুলো আত্মনিয়োগ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। নিম্নে এমন চারটি কাজ তুলে ধরা হলো;
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আজান ও প্রথম কাতারের মর্যাদা মানুষ যদি জানত আর কুর‘আ নিক্ষেপ (সমঅধিকারী একাধিক প্রার্থী থাকলে, সেখান থেকে একজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য তৎকালে প্রচলিত একধরনের লটারি) ব্যতীত সে সুযোগ তারা না পেত, তাহলে কুর‘আ নিক্ষেপ করত, তেমনি আগেভাগে জামাতে শরিক হওয়ার মর্যাদা যদি তারা জানত, তাহলে তারা সেদিকে ছুটে যেত। তেমনি এশা ও ফজরের জামাতে হাজির হওয়ার মর্যাদা যদি তারা জানত তাহলে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তারা তাতে হাজির হতো। (বুখারি, হাদিস : ২৬৮৯)
হাদিসের বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে উল্লিখিত আমলগুলো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। তাই রাসুল (সা.) তাঁর প্রিয় উম্মতদের এই আমলগুলোর প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। নিম্নে হাদিসের আলোকে এই আমলগুলোর কিছু ফজিলত তুলে ধরা হলো;
আজান দেওয়ার ফজিলত : আজান দেওয়ার মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর ঘরের দিকে আহ্বান করা অত্যন্ত সৌভাগ্যের কাজ। কারণ কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনগণ লোকদের মাঝে সুদীর্ঘ ঘাড়বিশিষ্ট হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭২৫)
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তারা মর্যাদায় উচ্চ হবে। শুধু তাই নয়, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর বহু মাখলুক তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আবদুর রহমান বিন আবু সাসাআহ থেকে বর্ণিত, আবু সাঈদ (রা.) আমাকে বলেছেন, যখন তুমি গ্রামে বা বন-জঙ্গলে থাকবে, তখন উচ্চৈঃস্বরে আজান দেবে। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, জিন, মানুষ, বৃক্ষলতা ও পাথর যে-ই এই আজান শুনবে, সে তাঁর জন্য (আখিরাতে) সাক্ষ্য দেবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭২৩)
প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ফজিলত : জামাতের সহিত নামাজ পড়া অত্যন্ত সওয়াবের। তার মধ্যে বেশি সওয়াবের হলো, প্রথম কাতারে নামাজ পড়া। কারণ প্রথম কাতারে নামাজ পড়লে আল্লাহর রহমত, ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) নিজেও প্রথম কাতারের মুসল্লিদের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেছেন। বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত,…রাসুল (সা.) বলতেন, আল্লাহ প্রথম কাতারের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও প্রথম কাতারের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। (নাসায়ি, হাদিস : ৮১১)
ইরবাদ বিন সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) প্রথম কাতারের লোকের জন্য তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং দ্বিতীয় কাতারের লোকের জন্য একবার। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৯৯৬)
আগে আগে জামাতে শরিক হওয়া : আগেভাগে মসজিদে যাওয়া, নামাজের জন্য অপেক্ষা করাও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ নামাজ আদায় করে যতক্ষণ মুসাল্লায় বসে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য নিম্নরূপ দোয়া করতে থাকেন, (অর্থ : হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করে দিন, হে আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন), যতক্ষণ না তার অজু ভঙ্গ হয়। (নাসায়ি, হাদিস : ৭৩৩)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি মসজিদে নামাজের অপেক্ষায় থাকে, সে যেন নামাজের মধ্যে থাকে। (নাসায়ি, হাদিস : ৭৩৪)
এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে পড়া : সাধারণত মানুষ এই দুটি ওয়াক্ত মসজিদে গিয়ে জামাতের সহিত আদায় করার ব্যাপারে অলসতা করে। অথচ এই দুটি ওয়াক্ত জামাতের সহিত আদায় করলে সারা রাত নামাজ পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। আবদুর রহমান ইবনে আবু আমরাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন মাগরিবের নামাজের পর উসমান ইবনু আফফান মসজিদে এসে একাকী এক জায়গায় বসলেন। তখন আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বললেন, ভাতিজা, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল। (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৭)। মহান আল্লাহ সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।