বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে যৌতুকের জন্য অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় স্বামী মোহাম্মদ সুমনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
শনিবার ভোরে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দন নগর জেডএ আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিন সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার।
গ্রেফতার সুমন ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার বাদুরখিল বোছা মিয়ার বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে।
র্যাব জানায়, পূর্বের দুটি বিয়ের তথ্য গোপন করে দেড় বছর আগে মনি আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তাকে বিয়ে করেন সুমন। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময়ে মনি আক্তারের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন তিনি। এ অবস্থায় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সংসার টিকিয়ে রাখতে স্বামীকে একটি মোটরসাইকেল ও ৫০ হাজার টাকা দেন স্ত্রী মনি আক্তার। এরই মধ্যে তিনি আট মাসের অন্তসত্ত্বা হন।
মনি আক্তারের বাবা চা বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্বামীর যৌতুকের চাহিদা মেটাতে মনি আক্তার নিজেও চা বাগানে কাজ শুরু করেন। সেখানে কাজ করে যা টাকা পেতেন, স্বামীকে খুশি রাখতে সবই তুলে দিতেন তার হাতে। কিন্তু এতেও চাহিদা মেটতো না স্বামী সুমনের। একদিন বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে মনি আক্তারকে চাপ প্রয়োগ করে তার বাবার কর্মস্থল দাঁতমারা চা বাগানে পাঠিয়ে দেন সুমন।
পরে একদিন সুমন নিজেই যৌতুকের টাকার জন্য মনি আক্তারের বাবার কর্মস্থলে যান এবং টাকা চেয়ে মনি আক্তারের ওপর চাপ প্রয়োগ শুরু করেন। ওই সময় মনি আক্তারের দরিদ্র বাবা টাকা দিতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে মনি আক্তারকে নিয়ে চলে আসেন সুমন।
সেখান থেকে সহযোগী টিপুর মোটরসাইকেলে রওনা হন তারা। পথে আসতে আসতে ‘যৌতুকের টাকা কেন আনতে পারলো না’ এ নিয়ে মোটরসাইকেলে বসেই স্ত্রীকে গালিগালাজ করতে থাকেন সুমন। একপর্যায়ে ভুজপুর থানার কালিকুঞ্জ নামক স্থানে এলে মনি আক্তারকে থাপ্পর দিয়ে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেন তিনি। এরপরই তিনি নিজের আঙ্গুল দিয়ে মনি আক্তারের বাম চোখ নষ্ট করে ফেলেন এবং দুই হাত-দুই পা মুচড়ে ভেঙে ফেলেন।
এতেও ক্ষ্যান্ত হননি সুমন। মনি আক্তারের মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে রক্তাক্ত করার পর মোটসাইকেলের গরম সেলেঞ্জার পাইপের সাথে বুক চেপে ধরে পুড়িয়ে ফেলেন। একপর্যায়ে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত জেনে তাকে প্রথমে নাজিরহাট সরকারি হাসপাতালে ও পরবর্তীতে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ২৬ দিন চিকিৎসা শেষে আট মাসের গর্ভাবস্থায় মনি আক্তার মারা যান।
র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নুরুল আবছার বলেন, আগের দুটি বিয়ের কথা গোপন করে মনি আক্তারকে বিয়ে করেছিলেন সুমন। আগের স্ত্রীদের ওপরও শারীরিক নির্যাতন চালাতেন তিনি। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সুমনকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে র্যাব।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ভোরে বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দন নগর জেডএ আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিষয় স্বীকার করেন সুমন। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে তাকে ভুজপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।