বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা অসীম দয়ালু, অতুলনীয় ক্ষমাশীল। তাঁর দয়া ও করুণা প্রতি মুহূর্ত, অনবরত বর্ষণ হতে থাকে। তদুপরি আল্লাহতায়ালা বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করে তিনি রহমতের বিশেষ বিশেষ অফার ঘোষণা করেন। দয়া ও করুণার সব দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। সৎকর্মের বিনিময়ে অনেক অনেক গুণে বাড়িয়ে দেন। ক্ষমা করেন অপরিমিত হারে। এমন একটি সেরা সুবর্ণ সুযোগ পবিত্র রমজানুল মুবারক। রমজানের প্রথম দশকে রহমত, মাঝের দশকে ক্ষমা এবং শেষ দশকে দোজখ থেকে মুক্তি প্রদানের ঘোষণা হয়েছে। (সহিহ ইবনে খুযাইমা-হাসান)। যারা ১০ দিন পর্যন্ত এই রহমতের সুযোগ গ্রহণ করেনি তারা অবশ্যই অপরাধী। তাদের এই অপরাধের ক্ষমা লাভের জন্য দয়াময় প্রভু আরও ১০ দিনের সুযোগ রেখে দিয়েছেন। যারা তখনো ক্ষমা গ্রহণের এই সুযোগ অবহেলা ও উদাসীনতায় পার করেছে তারা কঠিন শাস্তির উপযোগী। আর আল্লাহর শাস্তি হলো জাহান্নামের আগুন। তবে করুণাময় আল্লাহতায়ালা জাহান্নাম থেকে মানুষের মুক্তি লাভের জন্য আরও ১০ দিন পর্যন্ত সুযোগ রেখে দিয়েছেন। এই দশকে রয়েছে শবেকদর। হাজার মাস ইবাদত করা অপেক্ষা উত্তম এই শবেকদর। (সুরা কদর-৩)। মহানবী (সা.) ফরমান, ‘যে ব্যক্তি ইমান নিয়ে সওয়াবের আশায় শবেকদর পালন করবে তার অতীতের সব পাপ ক্ষমা করা হবে।’ (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক আরম্ভ হতো রসুলুল্লাহ (সা.) কোমর বেঁধে নামতেন। গোটা রাত জাগ্রত থাকতেন। পরিবারের সদস্যদের ইবাদতের জন্য জাগিয়ে দিতেন।’ (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)। অপর এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সাধনা করতেন।’ (সহিহ মুসলিম)।
আয়েশা (রা.) আরও বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রথম ২০ দিন নামাজ আদায় করতেন এবং ঘুমাতেন। কঠিন সাধনায় লিপ্ত হতেন এবং কোমর বেঁধে নামতেন।’ (আহমদ)। সাহাবি আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে শুরু থেকেই রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতেন এবং কখনো নিদ্রা যেতেন। তবে রমজানের ২৪ তারিখ থেকে কখনো চোখ বন্ধ করতেন না।’ (হিলইয়াতুল আওলিয়া)। রসুলুল্লাহ (সা.) এর অতীত এবং ভবিষ্যতের যাবতীয় পাপ আল্লাহতায়ালা ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। (সুরা আল ফাতাহ-২)। মহানবী (সা.) রমজানের সিয়াম সাধনায় সর্বাত্মক সাধনা চালিয়ে যেতেন। আমাদের প্রতিটি মুসলমানকে তাঁর অনুসরণ করে কঠোর সাধনার মাধ্যমে রমজান পালন করা প্রয়োজন। প্রয়োজন নিজেদের পরিবার পরিজনকেও রমজানের সিয়াম সাধনার প্রতি উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা। বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সা.) রাতে ইবাদতের জন্য ফাতেমা (রা.), আলী (রা.) এবং স্ত্রীদের জাগ্রত করে দিতেন। (আত তারগিব)।
রমজানের শেষ দশকে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আরেকটি ধারাবাহিক আমল ছিল ইতেকাফ করা। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)। আম্মাজান আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) আমরণ রমজানের শেষ দশক ইতেকাফ করেছেন। অতঃপর তাঁর বিবিগণ ইতেকাফ করেছেন। (সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম)। সাহাবি আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ধারাবাহিকভাবে ইতেকাফ করতেন। এক বছর করেননি, পরবর্তী বছরে (ইন্তেকালের বছর) ২০ দিন তিনি ইতেকাফ করেন।’ (আহমদ, তিরমিজি)। রসুলুল্লাহ (সা.) ধারাবাহিকভাবে ইতেকাফ করা ইতেকাফের প্রতি তাঁর গুরুত্ব বোঝায়। তাই ইতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। ইতেকাফ পাপমুক্ত থাকা ও শবেকদর পাওয়ার সহজ উপায়। আর এতে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ধারাবাহিক আমলের অনুসরণ। আল্লাহপাক আমাদের রসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণে রমজান পালনের তৌফিক দিন।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা