বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক:এ বছর মাঘ মাসের শেষ দিকে বৃষ্টি হওয়ায় দিনাজপুর জেলার লিচুর গাছগুলোতে নির্ধারিত সময়ের পরেও প্রচুর মুকুল এসেছে। ইতিমধ্যে লিচু বাগানগুলোতে তামাটে পাতার ভেতর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে লিচুর সোনালী রঙয়ের ফুল।
ফাল্গুনের প্রথম দিকে লিচু গাছে নতুন পাতার পাশাপাশি মুকুল আসা শুরু করেছে। প্রতিটি গাছ এখন মুকুলে ভরপুর। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর ফলন ভালো হাওয়ার আশাবাদ চাষিদের। বোম্বাই, মাদ্রাজি, বেদেনা ও চায়না-থ্রিসহ সকল জাতের লিচু গাছই মুকুলে ভরে উঠেছে। চাষিরাও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দিনাজপুর জেলা সদর ছাড়াও বিরল, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, ফুলবাড়ি, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, খানসামা ও কাহারোল উপজেলায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লিচু উৎপাদন হয়। মাটির গুনাগুন লিচু চাষের উপযোগী ও অর্থনৈতিকভবে লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় এই জেলার মানুষের কাছে দিন দিন সমাদৃত হচ্ছে লিচুবাগান।
দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ৬ নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাশিমপুর গ্রাম। এই মাশিমপুর গ্রামের বেদেনা লিচুর খ্যাতি দেশজুড়ে। এই লিচুর খোসা পাতলা, শাঁস পুরো রসালো ও বিটি ছোট হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এই বেদেনা লিচু মৌসুমের মধ্যভাগে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে যায়।
মাশিমপুর গ্রামের লিচুবাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে লিচুর সোনালী মুকুল। ফাল্গুনের শেষে বাগানগুলোতে লিচুর মুকুল থেকে কুঁড়ি আসা শুরু হবে। আর চৈত্রের শুরুতে কুঁড়ি থেকে ফুটবে গুটি লিচু। সবুজ গুটি থেকে বৈশাখের শেষে শোভা পাবে লাল টকটকে রঙের থোকা থোকা লিচু।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ কর হয়েছে। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে, মাদ্রাজি লিচু ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর জমিতে, চায়না-৩(থ্রি) লিচু ৭০২.৫ হেক্টর জমিতে, বেদেনা লিচু ২৯৪.৫ হেক্টর জমিতে, কাঠালী লিচু ২১ হেক্টর জমিতে এবং মোজাফ্ফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে।
সরেজমিন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, লিচুর ফুলে ছেয়ে গেছে প্রতিটি বাগান। আর বাগান পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। মুকুল এসে যেন ঝরে না পড়ে, সেজন্য এখন থেকেই প্রতিটি গাছের গোড়ায় সেচের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিরল উপজেলার লিচুচাষি মতিউর রহমান মতি জানান, এ বছর তার বাগানের ১৫ একর জমিতে প্রায় ৬০০ লিচু গাছে ফুল এসেছে। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লিচুর ফলন ভালো হবে। গাছ প্রতি সাড়ে তিন হাজারের মতো লিচু হলেও প্রায় ৪২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করা যাবে।
দিনাজপুরের মাসিমপুরের লিচুচাষি জহির উদ্দীন বলেন, বিগত বছরগুলোতে লিচু পাকার মৌসুমে রমজান মাস ও পরবর্তীতে করোনা মহামারির প্রকোপ থাকায় বাগান মালিকেরা তেমন লাভবান হতে পারেনি। এ বছর লিচুর মুকুল আর বর্তমান আবহাওয়া ভালো থাকায় আশায় বুক বেধেছি।
দিনাজপুর সদরের মাশিমপুরের লিচুবাগান মালিক আকবর আলী বলেন, মাশিমপুরের বেদেনা লিচুর খ্যাতি দেশজুড়ে। সম্প্রতি চায়না-থ্রি লিচুর চাহিদা কিছুটা বাড়লেও স্বাদের দিক থেকে বেদেনা লিচু অপ্রতিস্বন্দি। প্রতি বছর আমার বাগান থেকে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদি এমনকি সিলেট থেকেও ব্যাপারিরা আসে বেদেনা লিচু নিয়ে যায়। বিগত কয়েক বছর ব্যপারিরা কম আসলেও এই বছর বেচাকেনা ভালো হওয়ার আশা করছি।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. খালিলুর রহমান জানান, সারাদেশে লিচুর আবাদ হলেও দিনাজপুর জেলার লিচুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদন হবে। প্রতি হেক্টরে ২৫০টি লিচু গাছের হিসেবে দিনাজপুর জেলায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২৫০টি লিচু গাছে ফলন হবে। এছাড়াও বিছিন্নভাবে বসতবাড়ির প্রায় ৬ লাখ লিচু গাছে ফলন আসবে।
তিনি আরও জানান, লিচু দিনাজপুর জেলার একটি প্রধান অর্থকারী ফসল হিসেবে বিবেচিত হয়। দিন দিন এর অর্থনৈতিক পরিধি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ফসলের সাথে বাঁশের ঝুড়ি তৈরির পরিমাণ, বাগান শ্রমিকের কর্মসংস্থান ও পরিবহন ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। লিচু একটি পচনশীল পণ্য। আগে অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকার কারণে লোকসানে চাষিদের লিচু বিক্রি করতে হতো। বর্তমানে অনেকগুলো পরিবহন সংস্থা লিচুর মৌসুমে সারাদেশে লিচুর সরবরাহ করে থাকে। অনেক পরিবহন সংস্থা লিচুর মৌসুমে গাড়ির সংখ্যাও বাড়িয়ে দেয়।