বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষে নিহত শাওনের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশাসন ও সরকার ‘মিথ্যাচার’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শাওনকে ‘যুবদল কর্মী’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শাওনকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। পুলিশের এসপি সাহেব বলছেন, সে নাকি যুবদলের কর্মী নয়৷ সে একটা ওয়েল্ডিং ফ্যাক্টরিতে কাজ করে, একজন শ্রমিক, যুবদল নেতা; তাকে আপনারা হত্যা করেছেন।”

“তিনি যুবদলের কর্মী না হলেও একটা মানুষকে গুলি করে হত্যা করার অধিকার আপনাদের নেই৷”

শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় নারায়ণগঞ্জে শাওনের বাড়িতে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে সহানুভূতি প্রকাশ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

বৃহস্পতিবার শহরের ডিআইটিতে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শাওন প্রধান (২০)। তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ও বক্তাবলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পূর্ব গোপালনগরের প্রয়াত সাহেব আলীর ছেলে। নবীনগর শাহ্ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে তাদের একতলা বাড়ি।

শাওন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলীর ভাতিজা।

পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শাওন ‘রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন’। অপরদিকে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, সক্রিয় কর্মী শাওন বক্তাবলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

শাওনের আত্মত্যাগ এদেশের গণতন্ত্রের আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে, মানুষের দাবির কথা বলতে গিয়ে তিনি প্রাণ দিয়েছেন৷ ব্যক্তিগত কারণে প্রাণ দেন নাই৷ আমাদের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছেন৷”

এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “উপর মহলের অন্যায় কোনো হুকুম-নির্দেশ আপনারা মানবেন না৷ এই যে হত্যা হচ্ছে, এই হত্যার জবাবদিহি একদিন না একদিন তো করতে হবে। আমি আপনারদেরকে অনুরোধ করবো, এভাবে অন্যায়ভাবে মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারবেন না৷”

“পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভাইদেরকে অনুরোধ করবো, আপনারা আমাদের শত্রু নন৷ আপনারা আমাদের এই মানুষেরই সন্তান, আমাদেরই সন্তান৷ এদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা আপনাদের দায়িত্ব৷ শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের কথা শুনে নিরীহ জনগণের উপর গুলি চালানো আপনাদের দায়িত্ব নয়৷”

দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে শাওনের বাড়িতে সহানুভূতি প্রকাশের জন্য এসেছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এই ফ্যাসিবাদী ও গণতন্ত্রহরণকারী সরকার গুলি চালিয়ে আমার ভাই শাওনকে হত্যা করেছে৷ শাওনের আত্মত্যাগ এদেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে৷ আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে৷”

দীর্ঘ একযুগ ধরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার কেড়ে নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব৷

তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের রাজনৈতিক কথা বলবো, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে তার প্রতিবাদ করবো, সে অধিকাটুকুও কেড়ে নিয়েছে৷ পত্রপত্রিকায় দেখেছি, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পয়েন্ট ব্ল্যাংক থেকে বন্দুক তাক করে গুলি করছে৷ এটা একটা গণতান্ত্রিক স্বাধীন দেশে চলতে পারে না।”

“শুধুমাত্র শাওন নয়, কয়েকদিন আগে ভোলাতে একইভাবে ছাত্রদল নেতা নূরে আলমকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ গতকাল (বৃহস্পতিবার) মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুমিল্লাসহ অসংখ্য জায়গায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে গুলি করেছে৷”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সরকারকে সরিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে যদি আনতে না পারি তাহলে এদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হয়ে যাবে, স্বাধীনতা থাকবে না৷”

তিনি আরও বলেন, “দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রেখেছে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমাদের ৪৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে৷ নারায়ণগঞ্জে অসংখ্য নেতা-কর্মী আছে যারা আন্দোলন-সংগ্রাম করে, তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে রেখেছে৷”

নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালানোর আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের এখন দায়িত্ব হচ্ছে, কখনই উচ্ছৃঙ্খল হবেন না৷ শান্তিপূর্ণভাবে শৃঙ্খলার সঙ্গে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা আন্দোলন করবো৷ আমরা কখনই হয়রানিতে বিশ্বাস করি না, সন্ত্রাসে বিশ্বাস করি না৷”

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাংঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবিসহ স্থানীয় বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন৷