বিশেষ প্রতিনিধি
জেলা: বগুড়া :
বগুড়ার শাজাহানপুরে এক তরুণকে আটকে রেখে জোর করে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে ৪০ বছরের এক নারীর বিরুদ্ধে। ১৭ দিন ধরে তাকে ঘরে আটকে ঘর-সংসার করছেন ওই নারী।অভিযুক্ত নারীর নাম সখিনা বেগম। তিনি ওই উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের পারতেখুর পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ভুক্তভোগী তরুণের নাম জয়নাল সাগর ওরফে সোহাগ। তিনি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার রাজারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম ইব্রাহিম হোসেন। প্রায় এক বছর আগে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সখিনার সাথে তার পরিচয় হয়। এরপরে তারা প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। তবে ওই সময় সখিনা তার পরিচয় ও বয়স গোপন রেখেছিলেন। পরে প্রেমিকাকে বিয়ের উদ্দেশ্যে বগুড়ায় আসেন সোহাগ। বগুড়ায় এসেই সখিনার প্রতারণার ফাঁদে আটক হন তিনি। তার প্রেমিকার মা হিসেবে পরিচয় দেয়া সখিনাই এখন তার স্ত্রী! সখিনার দাবি তারা বিয়ে করে ঘর-সংসার করছেন। তবে প্রতারণার জাল থেকে মুক্তি পেতে সারাক্ষণ ছটফট করছে ওই তরুণ। এমনকি পুলিশ গিয়েও তাকে রক্ষা না করে ওখানেই রেখে আসে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পুলিশ বলছে, সোহাগের বয়স ২২ বছর, যা ছেলেটি নিজেই বলেছেন। আর তিনি স্বেচ্ছায় সখিনা বেগমকে বিয়ে করেছেন। তারা ভালো আছেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, সোহাগের বয়স ২০ বছরের বেশি হবে না। কম বয়সী ছেলের বিয়ে হওয়াটা দেশের আইন বিরোধী। তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে। বিয়ের কাগজপত্রও সঠিক নয়। শুধু মৌখিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জুন বাসযোগে বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় আসেন সোহাগ। তিনি ওই উপজেলার মাঝিড়াবন্দর এলাকায় বাস থেকে নামেন। ওই সময় সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সখিনা। তবে এসময় নিজের পরিচয় গোপন রাখেন সখিনা। সোহাগকে তিনি জানান তার প্রেমিকার মা তিনি। এভাবে প্রতারণা করে সোহাগকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে জোর করে ঐদিনই বিয়ে করেন সখিনা। সোহাগ ওই সময় প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য অনেক চেষ্টা করেও রক্ষা পাননি। এক পর্যায়ে শাজাহানপুর পারতেখুর পূর্বপাড়া গ্রামের স্থানীয় একজন সোহাগকে রক্ষা করার জন্য জাতীয় জরুরীসেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলেও উদ্ধার হয়নি সোহাগ। এখন সোহাগকে সখিনা ঘরে আটকে রেখেছেন। এমনকি দিনের অধিকাংশ সময়ই তাকে তালাবন্ধ ঘরে রাখা হয়। সখিনা জানান, তিনি সোহাগকে বিয়ে করেছেন। তার সুখে ঘর-সংসার করছেন। ভুক্তভোগী সোহাগ জানান, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরিচয় ও বয়স গোপন করে তাকে বগুড়ায় নিয়ে আসেন সখিনা। পরে জোর করে তাকে বিয়ে করেছেন। তিনি এমন বন্দি দশা থেকে মুক্তি চান। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নান্নু মিয়া জানান, সখিনার বিয়ের বিষয়টি তিনি জানেন। গ্রামের কিছু মুরব্বি নিয়ে তিনি সখিনার বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওই সময় সখিনা জানান ওই ছেলেটাকে বিয়ে করেছেন এবং তার সঙ্গে ঘর-সংসার করবেন। এরপরে তিনি চলে আসেন। তবে ওই সময় বিয়ের কাগজপত্র দেখেননি তিনি। শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সোহাগ নামে ওই ছেলের বয়স ২২ বছর হবে। তিনি স্বেচ্ছায় সখিনাকে বিয়ে করেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে ওই গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তখন সোহাগ পুলিশকে জানান তিনি ভালো আছেন। তারা সুখে ঘর-সংসার করছেন। তাকে আটক রাখার অভিযোগ সঠিক নয়।