বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: শীতকালীন খাদ্য তালিকায় প্রথমেই আসে অতিপ্রিয় খেজুরের রসের কথা। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালটা যেনো খেজুরের রস ছাড়া জমেই না। শীত ও খেজুরের রস যেনো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। রস হচ্ছে খেজুরের গাছ থেকে আহুত মুখোরোচক পানীয়। সকালবেলার ঠাণ্ডা, মিষ্টি খেজুরের রস যেনও অমৃত। এ ছাড়াও খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণ। আর রসের তৈরী গুড় অনিদ্রা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এই রস নিয়ে শুধু মানুষই নয় পক্ষীকূলও অপার আনন্দে মেতে উঠে।
বাংলা অগ্রহায়ণ মাস থেকে সাধারণত রস সংগ্রহ শুরু হয় এবং চলে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। তবে পৌষ ও মাঘ মাসে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়। কারণ এই দুই মাসে শীতের প্রকোপ থাকে সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়া যতো ঠাণ্ডা থাকে রসও ততো বেশি পাওয়া যায়।তাপমাত্রা বাড়ার সাথে রসও কমতে থাকে।
শীতের সকালে সূর্যি মামা উঁকি দেয়ার আগেই গাছিরা গাছ থেকে রসের হাড়ি নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কুয়াশা ঘেরা সকালে গাছিদের কাঁধে করে হাড়ি ভরা রস নিয়ে যাওয়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আমার মনে হয় গ্রামীণ বাংলাদেশ ছাড়া আর পৃথিবীর কোথাও হয়তো দেখাই যায় না। মনে করিয়ে দেয় রং তুলিতে আঁকা শিল্পীর এক মনোরম চিত্রকর্মের কথা।
খেজুরের রস ও গুড় ছাড়া শীতের পিঠা-পুলি ভাবা নিতান্তই অপ্রকৃত ব্যাপার। শীতের সকালে গাছ থেকে নামানো কাঁচা রসের স্বাদ যেমন বর্ণনায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়; তেমনি জ্বাল করা রসের তৈরি বিভিন্ন খাবারের স্বাদ ও চাহিদাও অনেক। কুয়াশা মাখা সকালবেলায় রসের তৈরি পায়েসের গন্ধে মু মু করে চারিদিকে।
খেজুরের রসের পাটালি গুড়েরও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে বাংলার ঘরে ঘরে। এই গুড় দিয়ে হরেক রকম পিঠা বানায় গাঁয়ের বধুরা। ভাপা, সিদ্ধপুলি, রসের চিতই এর মতো বহু রকম পিঠা। আর এই পিঠা বানানো ঘিরে শিশু-বৃদ্ধার বসে থাকার দৃশ্য বাংলার এক পুরনো সংস্কৃতিরই অংশ। মনে হয় শীত যতো বেশি, তাদের পিঠা খাওয়ার তৃপ্তি, আনন্দ ততো বেশি। এরূপ দৃশ্যকে কবি সুফিয়া কামাল যেভাবে চিত্রায়িত করেছিলেন -পৌষ পবনে পিঠে খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে।বড় উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।’
গত কয়েক বছরে এদেশ থেকে অনেক খেজুরের গাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে সব অঞ্চলে কম বেশি খেজুর গাছ থাকলেও গাছির অভাবে মিলছে না রসের দেখা। নগরায়ন এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গাছিরা। যারা আছে তারা রস ও গুড় বিক্রি করে তাদের সংসার চালাতে পারছে না। তাই এ কাজের প্রতিও তাদের তেমন কোন আগ্রহ নেই। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল থেকে গাছি আর রস দুটিই বিলুপ্ত হয়েছে। এখনো খেজুরের রসের চাহিদা থাকলেও আগের সেই আগ্রহ কোথায় যেনও হারিয়ে গেছে।