র্জালালুর রহমান, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে
কারও কারও ঘরে জ্বলছে বাতি, আবার কারও ঘরে এলইডি টিভি- ফ্রিজ। তাদের মাসিক বিদ্যুৎবিল আনুমানিক ১০০ টাকা। কারও কারওরটা আবার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বিদ্যুৎনির্ভর আরাম-আয়েশে কাটাচ্ছে তাদের বছরের পর বছর।
তবে ওইসব ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবহারের বৈধ কোনো মিটার নেই। মাসিক বিদ্যুৎ ব্যবহার কত ইউনিট হলো তা জানার উপায় ও নেই। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যায় মাসের পর মাস অধিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও নামমাত্র মূল্য দিয়ে থাকেন এসব অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা। চলমান দিনের পর দিন- বছরের পর বছর এভাবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সরকারী বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সুবিধা ভোগ করছেন এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা। এতে করে ক্ষতির মুখে পড়ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখি শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ এবং পূর্ব প্রান্তে গিয়ে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। রেলওয়ে স্টেশনের সীমানাপ্রাচীর টপকে হাতের বাম দিকে যে খাবারের দোকান সেই দোকানের মালিকের নাম মোস্তফা মিয়া তিনি বলেন আমার নামেই এই হোটেলটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত।
মোস্তফা মিয়া জানান, আমাদের এদিকে আনুমানিক ৩ শতাধিক দোকান এবং ঝোপরি বাড়িতে অবৈধবিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। দিনের পর দিন তারা এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। অথচ দেখেন আমি পল্লী বিদ্যুৎ থেকে অনেক টাকা দিয়ে সংযোগ নিয়েছি। বিলও আসছে অনেক বেশি, আমি যদি ওইরকম অবৈধ সংযোগ নিতাম তাহলে আমার মাসিক মাত্র ১০০ থেকে ২০০ টাকায় হয়ে যেতো।
পূর্বদিকের সীমানাপ্রাচীর ঘিরেই আওয়াল মিয়ার চা-পানের দোকান। এখানেও বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়, তবে কোনো মিটার নেই। আর এখানের অবৈধ বিদ্যুৎ লাইনগুলোর সংযোগে যুক্ত রয়েছে রেলওয়ের কর্মচারীরা। ওভারব্রিজের লোহার একটি অংশ স্পর্শ করে। শটসার্কিটসহ অন্যান্য কোন সমস্যা হলে লোহার এ পুরো ওভারব্রিজটিতে জড়িয়ে পড়বে। বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারাত্মক হতাহতের ঘটনা ঘটে যেতে পারে যেকোনো সময়। প্রাণ হারাতে পারেন ওই ওভারব্রিজ দিয়ে পারাপারে পথচারী ও সাধারণ মানুষ।
পূর্বদিকের ঝোপরিঘরের বাসিন্দা শফিক মিয়া এবং অপর একটি ঘরের বাসিন্দা রোমেলা বেগম বলেন, আমিনি নামক এক নারী তাদের ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন। তিনি এসে মাসে মাসে টাকা নিয়ে যান।
২০ বছর ধরে রেলের জায়গায় বাস করছেন বাবুল প্রধান নামক জনৈক বৃদ্ধ। তার বাড়ির একটি মিটার দিয়ে ৩টি ঘরে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তার মিটারের বিদ্যুৎ বিলটি পরীক্ষা করে দেখা গেল মিটারটি ইদ্রিস আলীর নামে। এ বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ডাক নাম ইদ্রিস মিয়া।
ঝোপরিঘরের অপর বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মিয়া তিনি স্বীকার করে বলেন, আমাদের এখানে (রেলের জমিতে) ৬টি ঘরে ৬টি পরিবার আছে। এগুলোর সব দেখাশোনা করে বাবলি হিজরা। প্রতি মাসে সে এসে প্রতি ঘর থেকে ২ হাজার টাকা করে ভাড়া উত্তলন করে নিয়ে যায়। আমাদের এখানে কোনো ঘরে বিদ্যুৎ মিটার নেই। তবে লাইট জ্বলে, ফ্যান-টিভি চলে।
দীর্ঘ সময়ের অনুসন্ধানে জানা যায়। প্রায় ৪ শতাধিক ভাসমান দোকান, ছোট টং দোকান এবং ঝুপরিঘরে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এসব অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগের সঙ্গে লাইনম্যান লোকমান মিয়াসহ খালাসি হায়দার আলী জড়িত রয়েছেন। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ভিত্তিতে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে আসছেন।
লাইনম্যান লোকমান মিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিভিন্ন কথোপকথনের মাধ্যমে তথ্য অনুযায়ী প্রশ্নের মুখে স্বীকার করেন অল্প কিছু দিন ধরে টাকা নিচ্ছেন। বেশি কিছু বলার আগেই সংযোগটি কেটে দেন। রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে উঠতে আশপাশে গড়ে উঠা টিন দিয়ে তৈরি করা ঘরগুলো চোঁখে পড়ে। সামনে এগিয়ে ঘরে থাকা লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘর তো তৈরি করে দিয়েছে রেলস্টেশনের কর্মকর্তারা। তারাই একটি ঘর থেকে ২ হাজার টাকা করে মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে এসব ঘরের ভাড়ার টাকা অসাধু কর্মকর্তারা।
শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশনমাস্টার মো: সাখাওয়াত বলেন, আমি শ্রমিক লীগের সভাপতি ও শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বে আছি। দলের পরিচয় দেয়ায় প্রশ্ন করতে তিনি বলে উঠলেন আমাদের এটা নিয়ম আছে কোন অসুবিধা নেই। বিদ্যুৎ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, শুনেছি স্টেশনের আশেপাশে কিছু অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আসলে আমার কাজের মধ্যে পড়ে না ও এটা আমার দায়িত্বও না। পরোক্ষনে জানতে চাই ষ্টেশন এলাকায় টিনের ঘর তৈরি, প্লাটফর্মে দোকান ভাড়া, অবৈধ ভাবে পাকাকরণ করে অনুমতি বিহীন অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে তিনি জানান, আমার দায়িত্ব স্টেশন এলাকা।
বাকী এত সব কিছু আমার জানা নেই। কিন্তু অবৈধ স্থাপনা গুলো স্টেশন এলাকায় গড়ে উঠা, স্বচক্ষে না দেখলে অনুমান করা যাবে না। আর এসব থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা অভিযোগ পাওয়া গেছে, সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আমলা জানান ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে সাবধানতার সাথে হাতিয়ে নিচ্ছে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা সাখাওয়াত। এক কর্মকর্তা এর সত্যতা নিশ্চিত করেন তিনি বলেন নাম বললে চাকুরী থাকবে না!
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিভাগের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখছি। দোষী বা অনিয়ম হলে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।