বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ আর কড়া বিতর্কের পর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যসূচিতে আবারো আসছে পরিবর্তন। আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য নতুনভাবে লেখা হচ্ছে গত ফেব্রুয়ারিতে বাতিল করা দু’টি বইয়ের পাঠ্যসূচি। জেলাপর্যায়ের বিভিন্ন স্কুলের শ্রেণী শিক্ষকদের আপত্তির মুখে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে আগামী বছরে (২০২৪ সালে) পরিবর্তন আসছে। অবশ্য এরই মধ্যে এই দুই শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বিষয়ে বড় রকমের পরিবর্তন আসার আভাস পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে ‘অনুশীলন’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দু’টি বই দেয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকে সরে এসেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এখন এই দুই বিষয়ের সমন্বয়ে বই হবে মাত্র একটি।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরুতে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর নতুন পাঠ্যসূচি নিয়ে তুমুল বিতর্কের পর ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে দু’টি বই প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। যদিও আগে থেকেই কিছু বিতর্কিত বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত থাকায় শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ ছিল। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন রাজপথে নেমে এসব বিতর্কিত বিষয় বাতিল করতে দাবি জানায়। শিক্ষাবিদদের মধ্যেও কিছু বিষয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিশেষ করে ইসলাম বিদ্বেষী ও ধর্মীয় অনুশাসনের পরিপন্থী কিছু বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত থাকায় সরকারও দেশে বিদেশে সমালোচনা ও বিকর্তের মধ্যে পড়ে। এসব বিতর্কিত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রণিত সিলেবাস ও বিষয়বস্তুতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য অনেক বিষয়েও আনা হচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন।
এদিকে পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন বিষয় ও সিলেবাস নিয়ে সম্প্রতি এনসিটিবি বগুড়া ও গাজীপুরে আয়োজন করা হয় দু’টি কর্মশালার। এই কর্মশালায় বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষাবিদরা অংশ নিয়ে অভিভাবকদের মতামত ও পাঠ্যবইয়ের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন। বিষয়গুলো আমলে নিয়েই এখন নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যসূচিতে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। এনসিটিবি সূত্রে এসব বিষয়ে জানা গেছে। চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণয়ন করা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি। ভুলভ্রান্তি ও বিতর্কের মুখে শিক্ষাবর্ষ শুরুর মাত্র এক মাস ১০ দিন পর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দু’টি পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার করে নিয়েছিল এনসিটিবি। এর পরে শিক্ষাবর্ষ শুরুর চার মাসের মাথায় এ দু’টি শ্রেণীর বইয়ে বানান ভুল থেকে তথ্যগত ভুল মিলিয়ে অন্তত ৪৩১টি সংশোধনী দিয়েছিল সংস্থাটি। এখন আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে বিষয়বস্তুসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর নতুন পাঠ্যবইয়ে লেখা ছিল পরীক্ষামূলক। পরবর্তীতে ভুলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
এখন ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর নতুন পাঠ্যক্রমের সাথে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বইয়েও কিছু পরিবর্তন আসছে। ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যবই চালু হবে। ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণীতে এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে আগামী বছর থেকে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার মতো বিভাগ বিভাজন আর থাকবে না। সব শিক্ষার্থীকেই মাধ্যমিক পর্যন্ত অভিন্ন বিষয় পড়তে হবে। বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: ফরহাদুল ইসলাম জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যসূচিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিতর্কিত কিছু বিষয় বাদও দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বাতিল করা দু’টি বইয়ের কিছু বিষয় নতুন করে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি আরো জানান, চলতি বছরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বিষয়ে প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার ওপর অনেক বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের ছবি ও বিষয়বস্তু নিয়ে বেশি বিতর্ক হয়। পরে দুই শ্রেণীর এই দু’টি বই প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি। এখন নতুন পাঠ্যসূচিতে কিছু বিষয়ের লিংক সংযুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বগুড়া ও গাজীপুরে শিক্ষকদের কর্মশালাতে এসব বিষয়ে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে। শিক্ষকদের সুপারিশের আলোকেও পাঠ্যসূচি সাজানো হবে।
অন্যদিকে এনসিটিবির পাঠ্যক্রম বিভাগ জানায়, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণী নয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর জন্যও ‘অনুশীলন’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দু’টি পাঠ্যপুস্তক থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন সব শ্রেণীতেই এই বিষয়ে একটি বই থাকবে। এখন শুধু বিজ্ঞান বিষয়ে ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ ও ‘অনুশীলন বই’ নামে দু’টি পাঠ্যপুস্তক থাকবে।