নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’-এর ছয় সদস্যকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গি সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য ইতোমধ্যে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় আটক হয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকজন সেখানে গিয়েছে। তবে তারা আটক বা ফেরত এসেছে কি না, তা জানা যায়নি।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবা (৪১), শরিফুল ইসলাম ওরফে মুরাদ (৩১), রহমান ওরফে উসাইমান (২৭), মুহাম্মদ জাকারিয়া ওরফে আবরার (২৪), আল আমিন ওরফে রবিন ওরফে সামুরা (২৪), আবু জর ওরফে মারুফ (১৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদী ও উগ্রবাদী বই এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
তাদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবা সংগঠনটির আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী ও প্রশিক্ষণ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন বলে দাবি করেছে র্যাব।
আজ সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত শরিফুলের সাথে ২০১৯ সালে চারজন গিয়েছিলেন। যারা এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তার মাধ্যমে ৩-৪ জন ভারতে গিয়েছে। তবে তারা সেখানে অবস্থান করছেন নাকি গ্রেপ্তার হয়েছেন এমন তথ্য শরিফুল আমাদের দিতে পারেননি। যারা ভারতের ট্রেনিং নেওয়ার জন্য যাচ্ছেন তারা অবৈধভাবে যাচ্ছেন ও আসছেন। যে চারজন ভারতে আটক হয়েছে বলে আমাদের শরিফুল জানিয়েছে আমরা তা মিডিয়ার তথ্য এবং পার্শ্ববর্তী দেশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেছি।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গেল বছরে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি গ্রেপ্তারকৃত ইসহাক জানতেন। তিনি মূলত গাজীপুর চৌরাস্তায় ব্যবসার আড়ালে কারাগারে যারা আসতেন যেতেন তাদের আত্মীয়স্বজনের সাথে যোগাযোগ করতেন। কারা কারাগারে আসবে যাবে এসব তথ্য তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাপস এর মাধ্যমেই পেতেন। যারা ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পালিয়ে গেছে তিনি তাদের ব্যাপারে জানতেন এবং এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে তিনি অবগত ছিলেন। তবে জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমাদের এখন পর্যন্ত জানায়নি। পলাতক জঙ্গিরা এখন কোথায় রয়েছে তাদের অবস্থান নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারিনি গ্রেপ্তারকৃত ইসহাক।
তিনি জানান, আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাকের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃত শরিফুল সংগঠনের বেশকিছু সদস্যকে তথাকথিত হিজরত ও বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠিয়েছিল। সাইবার নির্দেশনায় পাশের দেশে প্রেরণকৃত ৪ জন সদস্য এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়। তিনি কাশিমপুর কারাগারে গ্রেপ্তারকৃত আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সাথে নিয়মিত দেখা করতেন এবং তাদের আত্মীয়স্বজনদের দেখা করিয়ে দিতেন। এছাড়াও তিনি আনসার আল ইসলামের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় করায় সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক সাইবা হিসেবে পরিচিত পান।
খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুর রাজ্জাক দাখিল সম্পন্ন করেছেন। তিনি ২০১৫ সালে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে। এরপর সংগঠনের রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক এবং প্রশিক্ষণ শাখার প্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তার সঙ্গে আনসার আল ইসলাম এর বর্তমান আমিরের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে এবং তার নির্দেশেই তিনি রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
বাকিরা শিক্ষকতা ও বিভিন্ন পেশার আড়ালে এ সংগঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের কয়েকজনও ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে ফিরেছেন। তারা মূলত সংগঠনের নানা প্রশিক্ষণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।