বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : জাতীয় সংসদের বাজেট আলোচনাকে ‘এক ধরনের নাটক’ বলে অভিহিত করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। আজ বৃহস্পতিবার সিপিডি ও অক্সফাম আয়োজিত এক ভার্চুয়াল যৌথ সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
রেহমান সোবহান বলেন, ‘বাজেট আলোচনা মূলত এক ধরনের নাটক। সংসদ সদস্যরা নিজেদের এলাকার প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন। প্ল্যাকার্ড নিয়ে সংসদে কথা বলেন। বাজেট আলোচনায় একজন এমপির জন্য গড়ে ১০ মিনিট সময় দেওয়ার কোনো মানে নেই।’
সিপিডি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষার আওতায় অভীষ্ট মানুষেরা বাদ পড়ে যাচ্ছে, অন্যরা ঢুকে পড়েছে। আর করোনাকালে নতুন গরিব বেড়েছে। নতুন গরিব ও পুরোনো গরিব—এই দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ কতটা ঝুঁকিতে আছে, সেটাই বড় বিবেচ্য বিষয়।’ এ সময় দরিদ্রপ্রবণ এলাকা বিবেচনায় গরিব মানুষের জন্য বিমা সুরক্ষা নিশ্চিত করারও তাগিদ দেন তিনি।
সংলাপে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বাজেট নাটক কি না, জানি না। একটি স্টেজ থাকে, সেখানে গিয়ে আমরা হাজির হই।’ বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা অর্থহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি বলেন, ‘আলোচনা করতে হয় বলেই করি। ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকলে কী হয়, একটি পয়েন্ট আলোচনা করতেই ১০ মিনিট চলে যায়।’ তিনি উল্লেখ করেন, প্রান্তিক মানুষের কথা বাজেটে না এলে বাজেট অর্থহীন। বাজেট অনেকটা আমলানির্ভর হয়ে গেছে।’
এসময় সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। এগুলো বরাদ্দের চেয়ে বেশি দেখানো হয়। যত টাকা পাওয়ার কথা, তা দেওয়া হয় না এবং প্রকৃত সুবিধাভোগীরা পান না।’
অনলাইনে আয়োজিত এই সংলাপে সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি কোভিডের কারণে কর্মসংস্থানে প্রভাববিষয়ক এক সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে চাকরি হারানোর চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তারা গড়ে ৯৫ দিনের মতো কাজ পাননি। পরে তাদের অনেকেই কাজ পেয়েছেন। তবে আয় কমেছে। এর পরিমাণ গড়ে ১২ শতাংশ। করোনার কারণে সেবা খাতে চাকরি কমেছে। আর কৃষিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি।’ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ জেলার ২৬০০ খানার ওপর এই জরিপ চালানো হয় বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ প্রমুখ। শামস মাহমুদ বলেন, ‘করোনার সময় যেসব প্রতিষ্ঠান কোনও কর্মী ছাঁটাই করবে না, তারা আড়াই শতাংশ কর ছাড় পাবে। আর যারা ১০ শতাংশ নতুন কর্মী নিয়োগ দেবে, তারা আরও কর ছাড় পাবে। সেই ব্যবস্থা করা গেলে কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’