বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : নিয়ত হল আমলের প্রাণ। নিয়ত ছাড়া আমল শুদ্ধ হবে না। গ্রহণযোগ্য হবে না। সকল কাজের ফলাফল একমাত্র নিয়তের ওপর নির্ভরশীল দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আপনার নিয়ত যদি ভালো থাকে তাহলে তা আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন অন্যথায় নয়।
আপনি হজ করতে গেলেন এবং নিয়ত করলেন যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তাহলে তা কবুল করা হবে এবং হজের পরিপূর্ণ সওয়াব দেওয়া হবে। আর যদি নিয়ত করেন, মানুষজন হাজি বলবে তাই হ্জ করতে যাচ্ছি তাহলে তা কবুল করা হবে না এবং এই হজ করার বিনিময়ে কোনো সওয়াবও দেওয়া হবে না।
তেমনীভাবে আপনি অন্তর থেকে নিয়ত করলেন, কিছু দান করবেন কিন্তু কোনো কারণে পারলেন না। তাহলে ভালো নিয়ত করার কারণে আপনি সওয়াব পেয়ে যাবেন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥ ﴾ [البينة: ٥]
অর্থাৎ ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামাজ কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে। আর এটাই সঠিক ধর্ম।’ (সূরা বাইয়িনাহ্ ৫ নং আয়াত)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
قال : سمعْتُ رسُولَ االله صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يقُولُ » إنَّما الأَعمالُ بالنِّيَّات ، وإِنَّمَا لِكُلِّ امرئٍ مَا نَوَى ، فمنْ آانَتْ هجْرَتُهُ إِلَى االله ورَسُولِهِ فهجرتُه إلى االله ورسُولِهِ ، ومنْ آاَنْت هجْرَتُه لدُنْيَا يُصيبُها ، أَو امرَأَةٍ يَنْكحُها فهْجْرَتُهُ إلى ما هَاجَر إليْهِ « متَّفَقٌ على صحَّتِه
উমার রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘যাবতীয় কার্য নিয়ত বা সংকল্পের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাই প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত (সব দেশ ত্যাগ) আল্লাহর (সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তার রাসূলের জন্য হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যেই হবে, তার হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তারই জন্য হবে।’
এই হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহ এটিকে ‘এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক দ্বীন’ বলে অভিহিত করেছেন।
এটিকে ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তার গ্রন্থ সহীহ বুখারীতে সাত জায়গায় বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেক স্থানে এই হাদীসটি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল কর্মের বিশুদ্ধতা ও কর্মের প্রতিদান নিয়তের সঙ্গে সম্পৃক্ত সে কথা প্রমাণ করা। (সহীহুল বুখারী হাদীস নং ১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
وَعَنْ أبي هُريْرة عَبْدِ الرَّحْمن بْنِ صخْرٍ رضي االله عَنْهُ قال : قالَ رَسُولُ االله صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم: »إِنَّ االله لا يَنْظُرُ إِلى أَجْسامِكْم ، وَلا إِلى صُوَرِآُمْ ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعمالِكُمْ « رواه مسلم
আবূ হুরাইরাহ আব্দুর রহমান ইবনু সাখর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’ (সহীহুল বুখারী ৫১৪৪, মুসলিম ২৫৬৪)
শরীয়তের বিধানুযায়ী এক নফল নামাজে একাধিক নফলের নিয়ত করার দ্বারা সমস্ত নামাজই আদায় করার সাওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে ঐ নফল যদি কোনো ওয়াক্ত বা কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, তাহলে সেটা আদায়ের জন্য উক্ত ওয়াক্ত বা কাজ পাওয়া যাওয়া জরুরি। যেমন ইশরাক নামাজের জন্য উক্ত ওয়াক্তেই হতে হবে। তাহিয়্যাতুল মসজিদের জন্য মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বেই আদায় করতে হবে। (নাজমুল ফাতওয়া ২/২৬৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল কাজ করার পূর্বে নিয়ত সহিহ করে একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে করার তৌফিক দান করুক। আমিন।