* ভয় পেয়ে ভোট কেন্দ্রে আসেনি অন্য প্রার্থীদের ভোটাররা
* কেটলির এজেন্টকে মেরে ফেলার হুমকি
* ঈগল, আলমিরার এজেন্ট সেজে নৌকার জন্য কাজ
নারায়ণগঞ্জ -১ আসনের রূপগঞ্জের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর লোকজনের ক্যাডার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারা ভোট কেন্দ্রগুলোর সামনে ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান নিয়ে দিনভর প্রভাব বিস্তার করে। অন্য প্রথীর ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বিভিন্ন কৌশলে বাধা সৃষ্টি করে। ভোট দিতে না পারা শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৮ টি কেন্দ্রে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরেজমিনে এসব দৃশ্য দেখা গেছে। খোজ নিয়ে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি কেটলির এজেন্টদের কেন্দ্রে না আসার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে বেশি।
সকাল ৭ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায়, ভোটের আগের রাতে গাজীর অস্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়।
সকাল ১০ টার দিকে তারাবো পাট গবেষণা উপকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, গাজীর লোকজন ভোটকেন্দ্র ও বাহিরে দখল করে রেখেছে। অন্যরপ্রার্থীর এজেন্টদের হুমকি দিচ্ছে। এ কেন্দ্রের কেটলি প্রতীকের ( আলহাজ্ব শাজাহান ভূইয়া) এজেন্ট ইলিয়াস মিয়া বলেন, শনিবার রাত থেকে হুমকির উপর রেখেছে গাজীর লোকজন। পারলে তারা আমাকে মেরে ফেলে। মোবাইলে হুমকি দেওয়ায় মোবাইল বন্ধ রেখেছি। এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে তারা।’ ভয়ে তাকে বাহিরে ঘুরতে দেখা গেছে। কেটলি আরেক এজেন্ট এলাচি বেগম বলেন, ভয়ের মধ্যে আছি৷ অনবরত হুমকি দিচ্ছে দস্তগীর গাজীর লোকজন। ওই কেন্দ্রের আটটি বুথে খোজ নিয়ে জানা যায়, বেশিরভাগ বুথে নৌকা ও ঈগলের এজেন্ট রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রের বাহিরে সড়কজুড়ে রয়েছে কিশোর-যুবকরা ঘোরা-ফেরা করছে। তারা খোজ নিচ্ছে কেটলির লোকজন আসছে কী না।
এদিকে ৪ নান্বার বুথে নৌকার এজেন্ট নূর আলম এবং বিউটি নামে দুজনকে দেখা যায়। এছাড়া ঈগল ও আলমিরা প্রতীকে এজেন্ট পরিচয়ে নৌকার জন্য কাজ করছে কযেকজন। নূর আলম- বিউটি পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন কক্ষে আসা-যাওয়া করছে। এসব বিষয়ে বাধা দিলে কেন্দ্রের দায়িত্বরত এসআই হাবিবুর রহমানের সাথে তর্কে জড়ান তারা। এর কিছুক্ষণ পরেই নূর আলমের প্রভাব বিস্তার জানতে দায়িত্বরত এক সাংবাদিক এগিয়ে গেলে তাকেও হুশিয়ারি দেন।
এসব বিষয় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা প্রিজাইডিং অফিসারকে বিষয়টি জানালে নূর আলম তার কক্ষে যান।
ওই কেন্দ্রের ৮ বুথের আলমারি ও ঈগল প্রতীকের নামে নৌকার লোকেরা (১৬) এজেন্ট সেজে বসে আসে। বেশিরভাগ এজেন্ট এজেন্ট প্রার্থী নাম জানে না এবং তাদের অনেকে কাছে কোন কার্ড নেই। তবে বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান জানান, সকাল ৮ টা থেকে এখন পর্যন্ত থেকে সষ্ঠু সুন্দরভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৬৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৮৪১ জন নারী ভোটার ১৮৪৮ জন। মোট আটটি বুথে ভোটর গ্রহণ চলছে।
দায়িত্বরত এআই মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছি। কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।
পশ্চিমগাঁও বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে কেতলির লোকজনকে ঘিরে রাখে গাজীর লোকজন:
বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নে ১২২ নং ভোট কেন্দ্র পশ্চিমগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রের সামনে কেটালির লোকজনকে ঘিরে রাখে গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে প্রচার চালানো দৃর্বত্তরা। তারা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে মারমুখী ভুমিকায় ছিল। এখানে গাজীর লোক ছাড়া কেউ কথা বলবেনা বলে হুমকি দেয়। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক দুই ভোটার জানান, গাজীর লোকজন এখানে কেটলিসহ অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের কোনঠাসা করে রেখেছে। ভোট কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে যারা নৌকায় ভোট দিচ্ছে না তাদের হুমকি দিচ্ছে। কেটলির পক্ষে কথা বললেই তাকে ধরে আড়ালে চলে যাচ্ছে।
ঈগলের এজেন্ট সেজে নৌকার হয়ে কাজ করছে গাজীর লোকজন জানিয়ে অপর একজন বলেন, ভোট দিতে এসে যদি প্রাণটা চলে যায়, তাহলে ভোট দিমু কেমনে। ঈগল সতন্ত্র প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে গাজী গোলাম মর্তূজার লোকজন ডামি হয়ে গাজীর জন্য নৌকা প্রতীকের কাজ কাজ করতে দেখা যায়। একটি কেন্দ্রের ৭ নং বুথের ইসমত আরা ও নুরুন্নাহার নামে দুইজন ঈগলের এজেন্ট সেজে নৌকার জন্য কাজ করতে দেখা যায়। তবে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোতালেব খান বলেন, আমাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ দেননি। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়নি বলে দাবি করেন। ওই কেন্দ্রের মতো চনপাড়া আল-আমিন মডেল একাডেমি, আল আরাফাহ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (পশ্চিম ভবন কেন্দ্র-১), আল আরাফাহ ইসলিয়া দাখিল মাদ্রাসা (দক্ষিণ ভবন কেন্দ্র-২), জনকল্যাণ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও বড়ালু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাজ নিয়ে জানা যায়,। সেসব কেন্দ্রের সামনে গাজীর পক্ষের কাজ করার দৃর্বত্তের মহড়া দিতে দেখা গেছে৷
এর মধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে জনকল্যাণ আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখাযায়, নৌকার লোকজন নিয়ম ভেঙ্গে আনাগোনা করছে। তাদের আধিপত্যের কারনে এখানে কেটলির কোনো বুথে এজেন্ট ছিলো না। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে ১২ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হযেছে প্রায় ৩২ শতাংশ। কোনে ধরনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কেটলি কোনো এজেন্ট না থাকার কারনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই প্রার্থীর কোনো এজেন্ট কেনো নেই সেটা আমার জানা নেই। তবে একাধিক ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দস্তগীর গাজীর আধিপত্য ও ভয়ভীতির কারনে এ কেন্দ্রে কেটলির কোনো এজেন্ট ছিলো না।