মো: আজমল হোসেন জিতু
১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৭১ হয়ে ২০২৪ এ পৌছিয়েছে যে দেশ, সেই দেশকে নিয়ে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী মোড়লদের অযথা
মোড়লিপনা শুধু অবাকই করছে না আশাবাদীও করছে বেশ। এই দেশ, দেশের মাটি ও মানুষ, তারুণ্য রক্ত দিতে দিতেই হেঁটে এসেছে এ পর্যন্ত এবং সামনেও এগিয়ে যাবে বীরত্বের সাথেই —
এই দেশের’ই প্রখর মেধাবী সন্তানেরা বৃটিশ খেদাও আন্দোলনে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিল অকৃত্রিম ভাবে বাঁশের কেল্লা দিয়ে, সূর্য সেন, প্রীতিলতার উত্তরসূরীরা ৫২ তে রাজপথে নিজেদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে উর্দুকে ঝেটিয়ে বিদায় করে মা’য়ের
ভাষা ‘বাংলা’কে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ছিল। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের রক্ত ঋণ শোধ করা সম্ভব হয়নি বলেই ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে আইয়ুব শাহীর করা ভূয়া শিক্ষানীতির প্রতিবাদে ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুল
সহ অসংখ্য ছাত্রনেতা সেদিন হাসতে হাসতে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল রাজপথে। সৃষ্টি হয়েছিল বাংলার জাগরণের
নতুন পথ। রেনেসাঁ’র পথ ধরেই ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান আসাদ, মতিউরের রক্ত।
৭০’ এর নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করা বাঙালি জাতিকে দাবিয়ে রাখার হীন চেষ্টাকারী পশ্চিম পাকিস্তানকে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের
মাধ্যমে হারিয়ে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতি ছিনিয়ে এনেছিল একটি লাল-সবুজ পতাকা, সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র
বাংলাদেশ। কত শত,সহস্র,লক্ষ রক্ত ও মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েও লড়াই চালিয়ে গিয়ে ছিল বর্বর পাক হানাদারের বিরুদ্ধে বিজয়
আনতে তা পৃথিবীর ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই..।
৭১ পরবর্তী ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ’ কিন্তু সৃষ্টির পর থেকেই নজরে পড়ে ছিল সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব মোড়লদের। একের পর এক সাহায্য সহযোগিতার নাম দিয়ে ওরা লুটেছে বাংলাদেশের সম্পদ। বুঝে না বুঝে দু-ভাবেই বাংলাদেশের সম্পদ স্বাধীনতার পর থেকে ৫৩ বছর ধরে দিয়ে আসছিল আধিপত্য বিস্তারকারী,সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল নামক রাষ্ট্র গুলোকে তাদের এদেশীয় তল্পিবাহক ক্ষমতার মসনদ আহরণকারী বাংলাদেশী রাজনৈতিক নেতৃত্ব গুলো।
৫৩ বছর ধরে সাম্রাজ্যবাদীদের গোলামী করে শুধু মাত্র নিজেদের আখের গোছানো আর অর্থের পাহাড় করাই যেন ছিল তাদের সব কিছু… আশ্চর্য এবং অদ্ভুত এদের রাজনৈতিক চিন্তা এবং চেতনা! মাথায় পোঁচন ধরা সেই সব রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত চেতনার ধারকদের সব অচেতন চিন্তাকে সচেতন করতে রাজপথে পুনরায়
নামতে হয় ছাত্র,ছাত্রী সহ সাধারণ মানুষকে। পুনরায় রাজপথ হয় রক্তে লাল। বাংলাদেশ যেন ফিরে পায় তাঁর সেই রুপ… রক্ত দিয়েই
আদায় করতে হয় অধিকারের শ্লোগান। ২০২৪ এর ইতিহাসের মহা এই বিপ্লব জায়গা করে নেয় কালজয়ী এক বিজয়গাঁথার।
হতবিহ্বল আধিপত্য বিস্তারকারী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব মোড়ল গুলো ৭১ পরবর্তী সময়ের মতোই ২৪ এর ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে আজ অবধি চলমান রেখেছে তাদের হারানো ক্ষমতাকে
পুনরুদ্ধার করার সব কূটকৌশল। শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের এই বিজয়কে নস্যাৎ করতে একের পর এক ষড়যন্ত্রের ভিন্ন ভিন্ন নকশা দেখছে বাংলাদেশ। দেখছে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য উদগ্রীব রাজনৈতিক দল গুলোর ছোটাছুটি। “সংস্কার না নির্বাচন” তা নিয়ে কথা চালাচালি। নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের সূচনা, ক্ষমতা ধরে রাখার প্রবনতা। শিক্ষা ব্যবস্হা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনায়
থাকা সরকারের কোন অংশেই যেন আসছে না স্হীরতা!. আশ্চর্য!
সীমান্তের ওপারে আধিপত্যবাদী শক্তির নিদারুণ হুংকার চলছেই, দেশের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্রাজ্যবাদী মোড়লদের চেলা গুলো মাতৃভূমি “বাংলাদেশকে “পাকিস্তান, “আফগানিস্তান কিংবা “সিরিয়া, “লেবানন,”ইরাক,”ফিলিস্তিন,”হাইতি,”মিসর, “উগান্ডা বানাতে পারলেই যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
অতএব,
আমাদের ভাবতে হবে বিষয় গুলো গভীর ভাবে, তৈরী করতে হবে ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য। নজরদারি বাড়াতে হবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এদেশীয় সহযোগীদের দিকে। সরকারি দপ্তর গুলো থেকে শুরু করে রাজনীতিতে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক করার পক্ষে অবস্থান নেওয়া গোষ্ঠীকে এক বাক্যে “না” বলতে হবে। কন্ঠ ছেড়ে বলতে হবে;-
সাম্রাজ্যবাদী মোড়লদের আস্ফালন রুখে দিতেই সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ একথাটি মনে রাখা উচিৎ….