‘বালাগাল উলা বি কামালিহি, কাশাফাদ দুজা বি জামালিহি; হাছুনাত জামিউ খিছালিহি, ছাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি : ‘তাঁর সুমহান চরিত্রে তিনি পৌঁছে গেছেন সর্বোচ্চ মর্যাদায়। যার সৌন্দর্যের ঝলকে কেটে গেছে অন্ধকার। তাঁর চরিত্রে ফুটে ওঠেছে সব সুন্দর। দরূদ পড় তাঁর ও তাঁর পরিবারের ওপর।’
তিনি হলেন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত। রবিউল আউয়ালে মহান প্রভু তাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত করে পাঠিয়েছেন। এটি কোনো মানুষের কথা নয় বরং এ কথা বলেছেন স্বয়ং আল্লাহ-
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ
‘আর আমি তো আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।’
বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হয়ে তিনি কি নিয়ে এসেছেন। বিশ্ববাসীর রহমতের ছায়ায় অবস্থান করতে কী প্রয়োজন? হিজরি বছরের প্রথম বসন্ত রবিউল আউয়ালে তাঁর আগমনেই পূর্ণতা পেল বিশ্ব ও বিশ্বমানবতা। যে জিনিস পেলে বিশ্ববাসী পাবে পরিপূর্ণ শান্তি; তা নিয়ে তিনি বিশ্বনবিকে পাঠিয়েছেন এ ধরায়। মহান আল্লাহ বলেন-
هُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡهِرَهٗ عَلَی الدِّیۡنِ کُلِّهٖ ۙ وَ لَوۡ کَرِهَ الۡمُشۡرِکُوۡنَ
তিনিই পথনির্দেশ (কুরআন) এবং সত্য দ্বীনসহ (জীবন ব্যস্থা ইসলাম) নিজ রাসুল প্রেরণ করেছেন, যাতে তাকে সব জীবন ব্যবস্থার উপর জয়যুক্ত করেন; যদিও অংশীবাদীরা অপ্রীতিকর মনে করে।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৩৩)
কেমন ছিল তাঁর সুমহান চরিত্র। যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি অজ্ঞতার যুগে অবিশ্বাসীদের কাছে ছিলেন ব্যক্তিসত্ত্বায় ‘আল-আমিন বা বিশ্বাসী’। যিনি সুমহান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে রবিউল আউয়ালে আগমন করেন এ ধরায়। আল্লাহ তাআলা তাঁর চারিত্রিক সনদ এভাবে তুলে ধরেন-
وَ اِنَّکَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیۡمٍ
আর নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা ক্বলাম : আয়াত ৪)
হিজরি বছরের প্রথম বসন্ত তথা রবিউল আউয়ালে তিনি যে কোরআন নিয়ে এসেছেন। যে সুমহান চরিত্রের ঘোষণা নিয়ে এসেছেন। তাঁর সুমহান চরিত্রই তো উম্মতে মুহাম্মাদি তথা তাঁর অনুসারীদের আদর্শ। একাধিক আয়াতে এ ঘোষণাও দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ-
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا
‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ; তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡهِمۡ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّ فَاِنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡغَنِیُّ الۡحَمِیۡدُ
‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য তাদের (ইবরাহিম আ.-এর উত্তরসূরীদের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রত্যাশা করে; আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়ই আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।’ (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ৬)
আল্লাহ তাআলা রবিউল আউয়ালে ভালোবেসে প্রিয় নবিকে বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম ভালোবাসার পাত্র হিসেবে প্রেরণ করেছেন। কারণ তিনিই ছিলেন মহান আল্লাহর ভালোবাসার পাওয়ার একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ। সে কারণেই মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন-
قُلۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰهُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
‘(হে রাসুল! আপনি) বলে দিন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার (মুহাম্মাদ সা.) অনুসরণ কর; (তাহলেই কেবল) আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবন্ত কোরআন রূপেই এ পৃথিবীতে এসেছেন। তাঁর শুভাগমনে ইসলাম পরিপূর্ণতা পেয়েছে। সে কথাও আল্লাহ এভাবে তুলে ধরেছেন-
صِبۡغَۃَ اللّٰهِ ۚ وَ مَنۡ اَحۡسَنُ مِنَ اللّٰهِ صِبۡغَۃً ۫ وَّ نَحۡنُ لَهٗ عٰبِدُوۡنَ
‘(হে রাসুল! আপনি বলুন,) আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করলাম। আর রং এর দিক দিয়ে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক সুন্দর? আর আমরা তাঁরই ইবাদাতকারী।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৩৮)
সুতরাং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাগমনের মাসে সুন্নাতের হুবহু অনুসরণ; তাঁর রঙে রঙিন হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর রঙ ও ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করা ঈমানদার মুমিন মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। তবেই মহান আল্লাহ বান্দাকে ভালোবাসবেন; তার রঙে রঙিন করবেন। তাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন।
সুতরাং উম্মতে মুসলিমাহর উচিত,প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। প্রিয় নবির সর্বোত্তম আদশে নিজেদের উজ্জীবিত করা। এ হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা-
হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে (আদর করে) বলেছেন, ‘হে আমার প্রিয় সন্তান! যদি তুমি পারো তবে সকাল-সন্ধ্যা রাত-দিন এভাবে অতিবাহিত কর যেন তোমার অন্তরে কারও জন্য কোনো হিংসা-বিদ্বেষ না থাকে, তবে তা-ই কর। তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমার অন্যতম সুন্নাত আদর্শ। আর যারা আমার সুন্নাত আদর্শকে (আমলের মাধ্যমে) ভালোবাসবে, তারা প্রকৃত আমাকেই ভালোবাসে; আর যারা আমাকে ভালোবাসে তারা আমার সঙ্গেই জান্নাতে থাকবে।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রবিউল আউয়ালে বিশ্বনবির সীরাত ও উসওয়াতগুলো আকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন। বিশ্বনবির সুমহান আদর্শগুলোকে হৃদয়ে ধারণ ও জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।