খানিকটা হ্রাস পেয়েছে সারি, লোভা ও ধলাই নদীর পানিও।
তবে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতিটি পয়েন্টই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের পানি নামতে থাকায় নতুন করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
সিলেট মহানগরের বিভিন্ন এলাকার সড়ক এবং বসতবাড়ি আগের মত বন্যার পানিতে প্লাবিত রয়েছে।
বুধবার (১৮ মে) পর্যন্ত জেলার ১৩টি উপজেলার ১০টিতে ৭০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) নতুন করে আরও ১৬টি যোগ হয়ে বন্যা কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা বেড়ে হলো ৮৬টি।
সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, সিলেট জেলায় ১ হাজার ৪২১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা এবং বোরো ফসলের ১৭০৪ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজির ১ হাজার ৩৩৪ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার পুকুর ও জলাশয় প্লাবিত হয়ে প্রচুর পরিমাণ মাছ ভেসে গেছে।
এছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ মাদরাসাসহ ৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যা কবলিত হয়েছে। বন্যা কবলিত অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
পানিবন্দি লোকজনের আশ্রয়ের জন্য সিলেট জেলায় ৩২৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বর্তমানে ৯৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৭ হাজার ৩৪৯ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। ২৩৮টি গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, আশ্রিতদের শুকনো খাবার সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য বন্যা উপদ্রুপ সিলেট মহানগর ও উপজেলাগুলোতে ১৩ লাখ টাকা, ২৩৪ মেট্টিকটন চাল, ৩ হাজার ৯৯ প্যাকেট শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকা ও আশ্রয় কেন্দ্রে স্বাস্থ্য সেবা এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওষুধ, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হচ্ছে।
আগেরদিন বুধবার পর্যন্ত পানিবন্দি লোকজনের আশ্রয়ের জন্য সিলেট জেলায় ২৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হলেও একদিনের ব্যবধানে আশ্রয় কেন্দ্র বৃদ্ধি করা হয়েছে। গতকাল ৭৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬হাজার ৪৭৫ জন আশ্রয় গ্রহণ করলেও তা এখন ৭ হাজার ছাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় এবং বিকেলে বিশ্বনাথ উপজেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকা এবং আশ্রয় কেন্দ্রে পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
জানা গেছে, বুধবার পর্যন্ত বন্যায় সিলেট জেলার ৫৫টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে এবং ১৫টি ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। আর আউশ ধানের বীজতলা ১৩০১ হেক্টর এবং বোরো ফসলের ১৭০৪ হেক্টর ও গ্রীষ্মকালীন সবজির ১০০৪ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়াতে ক্ষয়ক্ষতি আরও বেড়ে গেছে।
বন্যায় সিলেট সদর ও জৈন্তাপুর উপজেলায় নৌকাডুবেতে ৩ জন এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলায় পাহাড় ধসে ১ জন মারা গেছেন। মৃতের পরিবারদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও করা হয়েছে।
এরআগে বুধবার (১৮ মে) পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব সিলেট মহানগর, সদর, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকা এবং আশ্রয় কেন্দ্র সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। পরবর্তীতে এদিন বেলা আড়াইটার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সিলেট জেলায় সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। তারা বন্যা মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন।
বন্য পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ত্রাণ সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সচিবের সঙ্গে আলাপেরে পরিপ্রেক্ষিতে ২দিনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর হতে ত্রাণকার্য নগদ অর্থ ২৫ লাখ টাকা, ত্রাণকার্য চাল ২০০ মেট্রিক টন এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানানো হয়। বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রী বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে উপ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, মহানগর এলাকার ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে অর্ধেকের বেশি এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে। সুরমার পানি উপচে নগরের ২২ নং ওয়ার্ড অভিজাত এলাকা উপশহরের বেশিরভাগ এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বানবাসীদের আশ্রয়ে ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যা উপদ্রুপ এলাকায় ৪দিন ধরে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটনায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। একইভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষের ঘরে চুলা না জ্বলায় খাবার সংকট প্রকট হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার নগরের বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় নগর ভবনে কাউন্সিলরদের নিয়ে জরুরী সভায় বসেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বৈঠকে পানিবন্দি মানুষের তালিকা প্রণয়ন, খাদ্য ও শিশু খাদ্য সরবরাহ, স্বাস্থ্য সেবায় ৩টি মেডিক্যাল টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্র প্রয়োজনে বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়।