বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ‘নিরপেক্ষ কমিশন’ চান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার (৬ মে) রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এ ঘটনার জন্য অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত। এর জন্য যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করা দরকার।’
‘কী ভয়াবহ! মানুষের বডি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, একেবারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গেছে, চেনা যাচ্ছে না। হঠাৎ করে যে বিস্ফোরণ হবে এটাও তারা বুঝতে পারেননি। যার ফলে এ ঘটনাগুলো ঘটেছে। নিহতদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহতদের সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি’, বলেন তিনি।
একইসঙ্গে এ ঘটনায় হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং দেশের সকল কনটেইনার ডিপোতে ‘তদারকি ব্যবস্থা’ চালু করার দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
কেমন তদন্ত কমিশন চান, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত অতীতের কোনো ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেখিনি। আমরা যখন নিরপেক্ষ কথাটা বলি, এটা মিন করি যে, দল নিরপেক্ষ এবং সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমন এক্সপার্ট যারা আছেন, যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, সত্যিকার অর্থে বিষয়গুলো যারা বুঝেন, তাদেরকে দিয়ে তদন্ত করা, দল নিরপেক্ষদের দিয়ে তদন্ত করতে হবে।’
সীতাকুণ্ডে অগ্নি দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, ‘গতকাল আর্মির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক অফিসারের কথা টেলিভিশনে শুনছিলাম- তিনি বলছিলেন যে, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। আজকে আমি এ জায়গায় প্রশ্ন করতে চাই- এ সরকার তাহলে কী করছে?’
‘আমি যে কথাটা বলছি যে, তথাকথিত অবকাঠামো নির্মাণের নামে নিজেদের পকেট ভারী করা, দুর্নীতির করা- এটাই তাদের মূল লক্ষ্য। জনগণের কল্যাণের জন্য, জনগণের সেফটি-সিকিউরিটির জন্য, মানুষকে ভালো রাখার জন্য এ সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এ সরকার যেহেতু নির্বাচিত সরকার নয়, সে কারণে তাদের জবাবদিহিতা নেই’, বলেন তিনি।
সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণে দেশের পোশাক শিল্প অথবা অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অলরেডি এ নিয়ে কথা-বার্তা শুরু হয়েছে। কারণ ইতোমধ্যে তাজরীন ফ্যাশন বা অন্যান্য ফ্যাক্টরিগুলো এবং রানা প্লাজা ধসের ঘটনার ব্যাপারে গার্মেন্টস যেভাবে একটা নেগেটিভ অবস্থায় এসেছিল, এটি পরবর্তীকালে যারা বায়ার ছিল বা বিদেশিরা বাংলাদেশের সঙ্গে কেনাকাটা করে তাদের সহযোগিতায় আমাদের গার্মেন্টস প্রডিউসার ও মালিকদের আগ্রহের কারণে সেই ব্যাপারটা অনেকটা কাটিয়ে এসেছে।’
‘কিন্তু নিরাপত্তার ব্যাপারটা এখন পর্যন্ত সেভাবে আসেনি। যে ধরনের অগ্নিকাণ্ডগুলো ঘটছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মতো প্রয়োজনীয় লোকবল, প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই’, যোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন শোষকের দলে পরিণত হয়েছে। এখন আর শোষিতের পক্ষে কথা বলার সুযোগ তাদের নেই। কারণ তারাই এখন শোষক হয়ে গেছে, শোষণ করছে বাংলাদেশকে। এখন তারা লুট করছে, দুর্নীতি করছে, অর্থপাচার করছে। মানুষের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখন তো আপনার বাংলাদেশের সামনে আর কিছুই নেই, পদ্মা সেতু ছাড়া আর বলে কিছুই নেই।’
‘অথচ এরমধ্যে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটলো, মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটলো সম্পূর্ণভাবে তাদের ব্যর্থতার জন্য। আমি পত্রিকায় দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী একটু সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, পদ্মা ব্রিজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। তাতে তো এই সমস্যার (সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ) সমাধান হয় না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ ঘটনার পর জাতীয় শোক ঘোষণা করা উচিত ছিল। অন্য যেকোনো সভ্য দেশ হলে তা-ই করতো। আমেরিকায় যে বাচ্চাগুলোকে মেরে ফেললো, তখনই আমেরিকা জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে।’
‘আপনি দেখেন, আসলে এ সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। ওরা জনগণের পালস বুঝে না, জনগণ কী চাইছে, কী আশা করছে- সেগুলো নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তারা মনে করে- আমরা বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছি, বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় থাকবো। সে কারণে দুঃসময়ে মানুষ যখন একটু সান্ত্বনা আশা করে, তখন তারা জনগণের ওপর আরেকটা যন্ত্রণা চাপিয়ে দেয়। তাদের একটাই লক্ষ্য- এ দেশকে লুট করা।’