বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির শূন্য পদ কিভাবে পূরণ করা হবে তা নিয়ে ডাকা বিশেষ সাধারণ সভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক হৈচৈ-হট্টগোল হয়েছে। এই হট্টগোলের মধ্যেই সরকার সমর্থক আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি ঘোষণা দিয়েছে। আর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীর বিশেষ সাধারণ সভা মুলতবি হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এনিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।
গত ১০ ও ১১ মার্চ দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু। গত ১৩ মার্চ বেসরকারিভাবে ফল ঘোষণা করা হলেও গত ১২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হয়। ওইদিনই নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু মতিন খসরু ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন থাকায় তার আর সভাপতির চেয়ারে বসা হয়নি। গত ১৪ এপ্রিল বিকেলে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে সভাপতির পদ শূন্য হয়। এ অবস্থায় সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কি পদ্ধতিতে সভাপতির পদ পূরণ করা হবে তার করণীয় ঠিক করতে বিশেষ সাধারণ সভা ডাকা হয়। আজ সভার শুরুতেই সাধারণ সভা পরিচালনা করা ও সভায় সভাপতিত্ব করা নিয়ে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। এ অবস্থায় সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নিজেই সভা পরিচালনা করবেন বলে ঘোষণা দেন। ঠিক সেই মুহূর্তে সমিতির সহসভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ দাঁড়িয়ে নিজেই সভাপতিত্ব করার ঘোষণা দেন। সহসভাপতির এই ঘোষণার পর সম্পাদক কাজল বলেন, উনাকে (শফিক উল্লাহ) সভাপতিত্ব করার কোনো কার্যববরণী পাস হয়নি। তার চেয়ে সিনিয়র আরেকজন সহ-সভাপতি আছেন। তখন শফিক উল্লাহ বলেন, আমিই আজকের সভার সভাপতি। এই সভা থেকে ঘোষণা করছি, আজ থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। তখন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা তাকে সমর্থন দেন। এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন, কণ্ঠ ভোট নয়, নির্বাচন চাই। একপর্যায়ে মিলনায়তনের বৈদ্যুতিক সংযোগ ও মাইকের সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়া হয়। মঞ্চের ওপর ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।
পরে এএম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি ঘোষণা দিয়ে সহসভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ’র স্বাক্ষরে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। অপর দিকে সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দস কাজল স্বাক্ষরিত পৃথক এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ব্যতিরেখে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশেষ সাধারণ সভা মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে।
পরে এ বিষয়ে এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বারের (সমিতি) আর্টিকেল ১৬ তে আছে যদি কোনো কারণে পদ শূন্য হয়, সভাপতি পদত্যাগ করেন বা পদচ্যুত করা হয় কিংবা মারা যান তাহলে বিশেষ সাধারণ সভার মাধ্যমে নতুন একজন সভাপতি নির্বাচিত হবেন। সেই বিশেষ সাধারণ সভায় কিভাবে সভাপতি হবেন তা নির্ধারণ করা হবে। আমি শুনতে পেলাম যে, আজকে বিশেষ সাধারণ সভায় ওনারা আমার নাম প্রস্তাব করেছেন, সেখানে অন্যকোনো নাম প্রস্তাব নাকি হয়নি, তারপরে আমার নাম সমর্থন করেছেন। আমি এখনও রেজুলেশন পাইনি। রেজুলেশন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘প্রয়াত সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুর কারণে বারের সভাপতি পদ শূন্য হয়েছে। বারের সাধারণ সদস্যরা মনে করছেন আমার মাধ্যমে বারের দাবি হয়তো পূরণ হবে। সেই কারণে ওনারা হয়তো আমার নাম প্রস্তাব করেছেন।’
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দস কাজল বলেন, নির্বাচিত সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে এই পদ পূরণে কি পদ্ধতিতে পূরণ করা হবে তার করণীয় ঠিক করতে আজকে বিশেষ সাধারণ সভার আহ্বান করা হয়েছিল। এই সাধারণ সভার এজেন্ডা ছিল নির্বাচনের পদ্ধতি কি হবে তা নিয়ে। সভার সময় নির্ধারিত ছিল দুপুর দুইটায়। আমি এই সভার সম্পাদক হিসেবে সভা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, সাধারণ সভার জন্য যে ব্যানার করা হয়েছিল, সেটি টানানো হয়েছিল। কিন্তু সভার শুরুতে দেখি ভিন্ন একটি ব্যানার। যেখানে সভার সভাপতিত্ব করার জন্য একজন সহসভাপতির নাম রয়েছে। সভার শুরুতে কে সভাপতিত্ব করবেন সিনিয়র সহ সভাপতি নাকি সহ সভাপতি এ বিষয়ে যখন আমি ব্যাখ্যা দিচ্ছিলাম। তখন আইনজীবীদের মধ্য থেকে কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন সভা পরিচালনা করা সাধ্য ছিল না। সভা মুলতবি করতে বাধ্য হই। আজকে সভায় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুলতবি করা হয়েছে।