বঙ্গনিউজবিডি ডেস্ক: ঢাকায় এক দফার সমাবেশ জনসম্পৃক্ত হয়েছে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে সরকারকে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, তাদের টার্গেট ছিল সমাবেশে বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে প্রবেশ করা। সেটি শতভাগ অর্জিত হয়েছে। তারা বলেন, নিকট অতীতে কোনো রাজনৈতিক দল ঢাকায় এত বড় সমাবেশ করতে পারেনি। সমাবেশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ঢাকাবাসীর ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। যা প্রমাণ করে, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির প্রতি তারাও একমত।
আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপি লাখো জনতার সফল সমাগমের মধ্য দিয়ে এক দফা ঘোষণা করেছে। সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। তাদের বিদায় নিতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী, লগি-বৈঠার মতো সহিংস কর্মসূচিতে নয়। আমরা ১৮ ও ১৯ জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছি। ঢাকায় আগামী দিনের কর্মসূচি আরো ত্বরান্বিত ও তীক্ষè হবে। জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই এই সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হবে।
এক দফার এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত। বিশাল মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসা দলের বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সমাবেশ সফলে প্রাপ্তি আছে। তবে চূড়ান্ত প্রাপ্তি হবে এই সরকারের যখন পতন হবে। সেজন্য রাজপথে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে।
দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব বলেন, ঢাকায় এ যাবতকালের মধ্যে সর্ববৃহৎ সমাবেশ হয়েছে। এই সমাবেশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ব্যাপক হারে সাধারণ মানুষও অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা বিএনপির ‘সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি’র প্রতি যেমন একাত্মতা প্রকাশ করেছে, তেমনি সরকারের প্রতিও তাদের অনাস্থা জানিয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, নেতাকর্মীদের এই উজ্জীবিত অবস্থা আগামী দিনের আন্দোলন সফলে সহায়ক হবে। অব্যাহত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই অবস্থা ধরে রাখতে চান নীতি-নির্ধারকরা। ঢাকার সমাবেশ থেকে গত বুধবার একদফার আন্দোলন এবং আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ দেশব্যাপী পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এর মধ্যে ১৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা হবে। একই কর্মসূচি থাকবে সব জেলা ও মহানগরেও। এ ছাড়া ১৯ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা হবে।
এটাকে যুগপৎ ধারার প্রাথমিক কর্মসূচি উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশে বলেন, ‘এরপরও যদি আঙুলে ঘি না ওঠে, তাহলে কী করে ওঠাতে হয়- এ দেশের মানুষ তা জানে। প্রয়োজনে প্রত্যাশিত কর্মসূচি নিয়ে এই কর্তৃত্ববাদী, লুটেরা সরকারকে সরিয়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। যদি কোথাও ফয়সালা না হয়, ফয়সালা হবে রাজপথে।’
বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ ও নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল গত শনিবার ঢাকা এসেছে। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত তাদের ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল চার দিনের সফরে ঢাকায় রয়েছে। প্রতিনিধি দলে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুও রয়েছেন।
বিএনপির পরিকল্পনা ছিল, বিদেশী কূটনীতিকদের সফরের মধ্যেই ঢাকায় বড় সমাবেশ করে একদফার আন্দোলনে যাওয়া। এর মধ্য দিয়ে দলটি আন্তর্জাতিক মহলকে এই বার্তা দিতে চেয়েছিল যে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার দাবি শুধু বিএনপির একার নয়- এটা জনগণেরও দাবি।
নেতারা মনে করছেন, সমাবেশে সাধারণ মানুষ ব্যাপকহারে অংশ নিয়ে বিএনপির এই দাবির প্রতি তারা একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া বিএনপিসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল যে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে নেমেছে-বিদেশীরাও সে বার্তা পেয়েছে।
বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে তাদের চূড়ান্ত টার্গেট সেপ্টেম্বর। কারণ সংবিধান অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন হওয়ার কথা। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে তিন মাস আগে অক্টোবরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তফসিল ঘোষণার আগেই রাজপথে চূড়ান্ত ফয়সালা করতে চায় বিএনপি। ফলে সেপ্টেম্বরে এক দফার আন্দোলনের কর্মসূচির ধরনে পরিবর্তন আসবে। তখন ঢাকায় ঘেরাওয়ের সাথে টানা অবস্থানের কর্মসূচি দিয়ে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির নীতি-নির্ধারকদের। তবে এক দফার সমাবেশ ঘিরে সারা দেশের নেতা-কর্মী বিশেষ করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস একটু বেশিই ছিল। তাদের প্রত্যাশা ছিল, সমাবেশ থেকে সরকার পতনে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। কিন্তু এক দফার প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ‘পদযাত্রা’ ঘোষণা করায় দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা কিছুটা হতাশাও প্রকাশ করেছেন।