বিজয় ধর, রাঙামাটি : পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রেখে, পাহাড়ের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে প্রতিনিয়ত মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী লংগদু জোন। এসব এলাকার জনসাধারণের জান মালের নিরাপত্তার সাথে সাথে অস্বচ্ছল পরিবার গুলোকে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে দিতে দৈনন্দিন নানা উপকরণ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এরই ধারাবাহিকতায় স্বয় সম্বলহীন স্বজন হারা প্রতিবন্ধি, যার ভিটা মাটি সহ নাই কোন বাসস্থান। যিনি তার এক মাত্র মা কে নিয়ে বর্তমানে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলা গাঁথাছড়া মিস্তিরি টিলা দুর সম্পর্কীয় নানার বাড়িতে অবস্থান করছেন।ছেলেটির নাম রাকিব। তার এমন করুণ কাহিনী শুনে স্থীর থাকেনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লংগদু জোনের জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল হিমেল মিয়া ।
রাকিবকে স্থায়ী ভাবে স্বাবলম্বী করতে, রাকিবের চাহিদা অনুযায়ী তাকে একটি অটো রিকশা দিয়ে পাশে দাড়িয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী লংগদু জোন।
রাকিব জানায়, ছোট কালে মা কে ছেড়ে চলে যায় বাবা, মা মানুষের বাসায় কাজ করে বড় করে তুলেন একমাত্র ছেলেকে। দশ বছর বয়স না হতেই কাজ শুরু করেন সে।
বাবা ছেড়ে দেওয়ার পর মা তাকে নিয়ে ঢাকা শহর চলে যায়, সেখানে বাসের হেলপার হয়ে মায়ের দুঃখ মোচনের চেষ্টায় কাজ শুরু করেন রাকিব। বয়স ১৯ হলে নিজেই ড্রাইভার হয়ে লোকাল বাস চালানো শুরু করেন।
এরি মধ্যে রাকিব বিয়ে পীড়িতে বসেন একজন গার্মেন্টসে চাকুরীজীবি রমনীর সাথে। সংসার জীবনের দুবছর হতেই তাদের কোল আলোকিত করে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সুন্দর সুখময় জীবন চলছিলো।
বিপত্তি ঘটে তখনি,একদিন হঠাৎ রাকিবের গাড়িকে দ্রুত গতিতে আসা অন্য একটি বাস আক্রমণ করে,যার ফলে তছনছ হয় রাকিবের ভাড়ায় চালিত বাসটি। সাথে রাকিবের একটি পা জীবনের জন্য অচল হয়ে যায়। অন্যটি ইন্জুরি হয়ে প্রতিবন্ধি। স্বয় সম্বলহীন স্বজন হারা রাকিবের মা দিশে হারা হয়ে মানুষের কাছে হাত পেতে ছেলের চিকিৎসা করায়। এরি মধ্যে ছেলের বউ কন্যা সন্তানকে নিয়ে উধাও। সর্বহারা হয়ে দুর সম্পর্কীয় নানা বাড়িতে উঠেন রাকিব।
রাকিব সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি মা কে নিয়ে কোথায় যাবো কি করবো,কোথায় থাকবো কোন ঠিকানা নাই। আল্লাহ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে আমাকে বাঁচার একটি রাস্তা করে দিয়েছেন। না হয় মানুষর কাছে হাত পেতে আমার জীবন চালাতে হতো। সেনাবাহিনীর প্রতি আমি ঋণী। যেই স্যার আমার জন্য এো কিছু করেছে আল্লাহ যেনো স্যারকে বড় করে।
রাকিবের মা রাহিমা বেগম বলেন, দুনিয়াতে আমার ছেলে আর আমি ছাড়া আমাদের কেউ নাই। ছেলেটা যখন সুস্থ ছিলো তখন কোনরকম দিন পার করেছি। এক্সিডেন্ট এর পর মানুষের কাছে হাত পেতে তার চিকিৎসা করাই। সর্বহারা হয়ে গাঁথাছড়া আসি। এখানে এসে সেনাবাহিনীর এতো বড় উপহার পাবো আমরা কল্পনা করিনি। যেখানে আমাদের মা ছেলের ভবিষ্যত অন্ধকার সেখানে আল্লাহর রহমতে সেনাবাহিনী আমাদের আলো করে দিয়েছে। আমরা এই ঋণ কখনো শেষ করতে পারবোনা। সেনাবাহিনীর প্রতি আমরা মা ছেলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এবিষয়ে জোন অধিনায়ক লে.কর্নেল হিমেল মিয়া জানান, সমাজের অবহেলিত পাহাড়ী বাঙ্গালী জন সাধারণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী লংগদু জোন।তারই ধারাবাহিকতায় সর্বহারা একটি জীবনকে পুনরায় উজ্জীবিত করার সামন্য চেষ্টাটুকু করেছে সেনাবাহিনী। ভবিষ্যতেও এধরণের মানবিক কাজ অব্যাহত থাকবে।